শীত মানেই পিঠা খাওয়ার উৎসব কিন্তু ব্যস্ত নগরজীবনে বাসায় পিঠা তৈরির ফুরসত কই? এখন দোকান থেকেই মানুষ পিঠা কিনে খায়। চাইলে আপনিও শুরু করতে পারেন পিঠাপুলির এমনই একটি দোকান। জেনে নিন বিস্তারিত।
শুরু করা যায় ছোট্ট একটি দোকানঘর দিয়েই। অভিজাত কোনো এলাকা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ বা শপিং মলের আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ কোনো স্থান হলে ভালো হয়। ঘরের আয়তন অনুসারে মানানসই কয়েকটি চেয়ার-টেবিল দিয়ে সাজাতে পারেন। আর্থিক সামর্থ্য না থাকলে ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকানও দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে পিঠা পরিবহনের জন্য লাগবে একটি ভ্যান। এ ক্ষেত্রে ঘরে বসেও তৈরি করতে পারেন পিঠা। তবে চুলা সঙ্গে রাখলে গরম গরম পিঠা বানিয়ে পুরো শহরেই বিক্রি করতে পারবেন।
যা যা লাগবে
উপকরণ কেনা বাবদ লাগবে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। দোকানঘরের ভাড়া ও পজেশন বাবদ গুনতে হবে একটি বড় অঙ্কের টাকা। এটি নির্ভর করে এলাকা ও দোকানের অবস্থানের ওপর। প্রতিদিন পিঠা তৈরির কাঁচামাল কেনার জন্য লাগবে পাঁচ শ থেকে এক হাজার টাকা। লাগবে স্টোভ বা চুলা, মাটির হাঁড়ি-পাতিল, কড়াই, ছাঁচ, ঢাকনা, জগ, প্লেট, গ্লাস, চামচ প্রভৃতি স্থায়ী উপকরণ। পিঠা তৈরির সময় লাগবে চালের গুঁড়া, চিনি, গুড়, লবণ, দুধ প্রভৃতি উপাদান।
হরেক রকম পিঠা
এলাকা, দোকানের অবস্থান, মানুষের চাহিদা ও খরচের ওপর ভিত্তি করে পিঠার আইটেম ও দাম নির্ধারণ করতে হবে।
মালপোয়া পিঠা ১৫-২৫ টাকা, রসফুল পিঠা ১৫-২০, দুধকলি পিঠা ২০-২৫, নকশি পিঠা ২০-২৫, ভাপা পিঠা ১০-২০, নারিকেল ঝুড়ি পিঠা ২০-৩০, পাটিসাপটা পিঠা ১৫-২৫, পুলি পিঠা ১৫-২০, দুধ চিতই পিঠা ২০-২৫, পাকন পিঠা ১০-১৫, মালাই পিঠা ২০-৩০, তেলপোয়া পিঠা ১০-১৫, চিতই পিঠা ১০-১৫, চন্দ্রপুলি পিঠা ১৫-২০, ফুলঝুরি পিঠা ১০-১৫, মোরগ সংসার ১৫-২০, ঝাল পাকোড়া পিঠা ১৫-২০, ডিম পাকন পিঠা ১০-১৫ টাকা।
পিঠা তৈরির কায়দাকানুন
বেশির ভাগ পিঠা তৈরি করা হয় চালের গুঁড়া দিয়ে। লক্ষ রাখতে হবে চালের গুঁড়া যাতে ঝরঝরে ও মসৃণ হয়। বাজার থেকে ভালো মানের গুঁড়, ময়দা ও চিনি কিনতে হবে। পিঠা তৈরির জন্য নানা নকশার ছাঁচ কিনতে পাওয়া যায়। সেগুলো কিনে নিলে নতুন নতুন নকশার পিঠা বানানো যাবে। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নানা স্বাদের পিঠা বানানো শেখার জন্য অভিজ্ঞ কারো কাছে তালিম নিতে পারেন। নানা স্বাদের, নানা রকমের পিঠা বানানোর কায়দা হাতে-কলমে শিখে নিতে পারলে আর ভাবনা নেই। শেখা যাবে রেসিপির বই থেকেও।
রাখতে হবে পার্সেলের ব্যবস্থা
রবীন্দ্র সরোবরের পিঠাঘরের অপারেশন ইনচার্জ মুদাসসির হোসেন খান জানান, বিভিন্ন পার্টি, জন্মদিন, বিয়েবাদ্যিতে অনেকে পিঠার অর্ডার দেয়। বিভিন্ন পার্টি সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলে অর্ডার পেতে সুবিধা হয়।
৫০ শতাংশ অগ্রিম নিয়ে পিঠা সরবরাহ করতে পারেন। অর্ডার অনুসারে সময়মতো পিঠা সরবরাহ করতে হবে। দোকানে রাখতে হবে পার্সেলের ব্যবস্থাও। পিঠা সরবরাহের জন্য কাগজের ঠোঙা বা প্যাকেটের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
গরম গরম ও টাটকা
গুলিস্তানের খাবার দাবার পিঠাঘরের ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম জানান, অনেক পিঠা গরম না থাকলে খেয়ে মজা নেই। তাই ক্রেতারা যাতে পিঠা গরম গরম পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সব উপকরণ তৈরি থাকলে পিঠা বানাতে বেশি সময় লাগে না। তাই গ্রাহক সমাগম বেশি না হলে অর্ডারের পর পিঠা বানিয়ে দিতে পারেন। পচা-বাসি পিঠা পরিবেশন করবেন না। দোকানঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাও জরুরি। রাখতে হবে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা।
লাভের হিসাব
লাভের পরিমাণ নির্ভর করে পণ্য বিক্রির ওপর। তবে প্রয়োজনীয় উপকরণ, কাঁচামালের খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ টাকা আয় করা কঠিন কোনো বিষয় নয়। অর্ডারের মাধ্যমে পিঠা সরবরাহ করতে পারলে লাভের পরিমাণ বাড়বে।