প্রচ্ছদ > আইনশৃঙ্খলা > আইন-কানুন > মেধাস্বত্ব বা কপিরাইট আইন
মেধাস্বত্ব বা কপিরাইট আইন

মেধাস্বত্ব বা কপিরাইট আইন

আরাফাত শাহরিয়ার :::

মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ করার জন্য কপিরাইট অফিস রয়েছে স্বাধীনতার পর থেকেই। সৃজনশীল রচনাকর্ম অর্থাৎ সাহিত্য, নাটক, গান, পেইন্টিংস, ছবি, চলচ্চিত্র ইত্যাদির অবৈধ মুদ্রণ, প্রকাশ, পুনরুৎপাদন, পুনর্নির্মাণ, পুনঃপ্রকাশ এবং পুনঃপ্রদর্শন রোধ করাই কপিরাইট অফিসের কাজ।

কপিরাইটকে আইনগতভাবে শক্তিশালী করার জন্য সরকার কপিরাইট আইন-২০০০ (২০০০ সালের ২৮ নম্বর আইন) প্রণয়ন করে। এ আইনের ফলে পুরনো কপিরাইট অধ্যাদেশ ১৯৬২ (অধ্যাদেশ নম্বর ৩৪, ১৯৬২) বাতিল করা হয়। নতুন এ আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে একটি কপিরাইট অফিস, রেজিস্ট্রার অব কপিরাইটস ও কপিরাইট বোর্ড গঠন এবং বোর্ডের ক্ষমতা ও কার্যপদ্ধতির বিধান প্রণীত হয় (কপিরাইট আইন ২০০০, অধ্যায়-২ ধারা ৯, ১০, ১১ ও ১২)। সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দিয়ে ১ নভেম্বর ২০০০ কপিরাইট আইন কার্যকর করা হয়। ২০০৫ সালের ১৮ মে এ আইন রাষ্ট্রপতির সম্মতি লাভ করে।

কপিরাইট আইনের অধীনে কপিরাইটযুক্ত কোনো ব্যক্তির মেধাস্বত্বের মেয়াদ কত বছর পর্যন্ত বহাল থাকবে তা কপিরাইট আইন ২০০০, (২০০০ সালে ২৮ নম্বর আইন) অধ্যায়-৫, ধারা-২৪ থেকে ২৯, ৩০, ৩১, ৩২ ধারায় উল্লেখ রয়েছে।

আইনে বলা হয়েছে, রচয়িতার মৃত্যুর ৬০ বছর, ৫০ বছর ও ২৫ বছর পর পর্যন্ত মেধাস্বত্ব বহাল থাকে। কপিরাইট আইন ২০০০-এর ১০ ধারায় রেজিস্ট্রারের কার্যাবলি নির্ধারণ করা হয়েছে। আইনের ১১ ও ১২ ধারায় কপিরাইট বোর্ডের গঠন এবং বোর্ডের ক্ষমতা ও কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়েছে।

কপিরাইট বোর্ড এবং কপিরাইট রেজিস্ট্রারকে আইনের ৯৯ ধারা মতে কয়েকটি ক্ষেত্রে দেওয়ানি আদালতে ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। কপিরাইট আইনের ৫৬/৫৭ ধারায় কপিরাইট সার্টিফিকেট ইস্যু করার ক্ষমতা রেজিস্ট্রার অব কপিরাইটসকে প্রদান করা হয়েছে। আইনের ৯৫ ধারা অনুযায়ী কপিরাইট বোর্ডের কাছে আপিল করার বিধান রয়েছে।

কপিরাইটের মালিকের অনুমতি ছাড়া কপিরাইটযুক্ত কর্মের চুরি, নকল, মুদ্রণ, পুনঃমুদ্রণ, অনুবাদ, প্রকাশ, পুনঃপ্রকাশ, পুনরুৎপাদন, অভিযোজন, প্রচার, সম্প্রচার, প্রদর্শন, রেকর্ডিং ও ভাড়া বা অধিকার লঙ্ঘন করলে আইনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে সর্বোচ্চ চার বছরের কারাদণ্ড এবং জরিমানা হিসেবে ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের (ধারা-৮২-৮৩) কথা বলা হয়েছে। সুতরাং আইন অনুযায়ী, যাঁরা কোনো লেখক বা প্রকাশকের কপিরাইট করা বই পিডিএফ আকারে অনলাইনে প্রকাশ করেন তাঁরাও অভিযুক্ত হিসেবে গণ্য হবেন।

কপিরাইট আইনের আওতায় দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় ক্ষেত্রেই মামলা করা যায়। নিষেধাজ্ঞা ও ক্ষতিপূরণের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে দেওয়ানি মামলা করতে হবে। ফৌজদারি মামলা করা যাবে দায়রা জজ আদালতে। মামলা নিয়ে হাইকোর্টে আপিল করা যাবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কপিরাইট বোর্ডে আপিল করারও বিধান আছে। আইনের ৯৪-৯৬ ধারায় এ-সংক্রান্ত কথা বলা হয়েছে। মেধাস্বত্ব চুরি রোধে আইনে পুলিশের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। তবে বাংলাদেশে কোনো লেখক অনলাইনে বই প্রকাশ করে দেওয়ার কারণে মামলা করেছেন বা আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছেন- এমন কোনো তথ্য জানা যায়নি।

Comments

comments

Comments are closed.