ট্রাফিক আইন না মানাসহ বিভিন্ন কারণে পুলিশ গাড়ি আটক করে। যেমন- সঠিক জায়গায় পার্ক না করা, বেপরোয়া গতিতে চালানো, চলতে গিয়ে পুলিশের নির্দেশনা না মানা, ফিটনেস-সংক্রান্ত কাগজপত্র নবায়ন না করা, ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন না করা ইত্যাদি।
যে কারণে মামলা হতে পারে
বৈধ কাগজপত্র না থাকলে : রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, ফিটনেস সার্টিফিকেট, ট্যাক্স টোকেন, ইনস্যুরেন্স, সাধারণ পরিবহনের জন্য রুট পারমিট, সর্বোপরি চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি না থাকলে মোটরযান আইনে মামলা হতে পারে। এগুলোকে ডকুমেন্টারি মামলা বলা হয়।
ভুল করা বা ট্রাফিক আইন না মানা: ট্রাফিক সিগন্যাল বা লাইট না মেনে গাড়ি চালানো, বিপজ্জনকভাবে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানো, যখন-তখন লেন পরিবর্তন করা, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বলা, হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালানো ইত্যাদি কারণে মামলা হতে পারে।
যানবাহনের ত্রুটি : যানবাহনের বিভিন্ন ত্রুটি, যেমন- হেডলাইট না জ্বলা বা না থাকা, ইন্ডিকেটর লাইট না থাকা বা না জ্বলা, সাধারণ পরিবহন বা গাড়ির বডিতে পার্টিকুলার বা বিবরণ না থাকা, মালিক বা মালিকের নাম-ঠিকানা না থাকা, গাড়িতে অতিরিক্ত আসন সংযোজন অথবা বিআরটিএ অনুমোদন ছাড়া কোনো সংযোজন বা পরিবর্তন করা ইত্যাদি কারণে যানবাহন মামলা হতে পারে।
যানবাহনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
মোটরসাইকেল
R/C- রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট
I/C – ইনস্যুরেন্স সার্টিফিকেট
T/T – ট্যাক্স টোকেন
D/L – ড্রাইভিং লাইসেন্স
মাইক্রো/কার/বাস ভাড়ায় ব্যবহৃত হলে
R/C – রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট
F/C – ফিটনেস সার্টিফিকেট
R/P – রুট পারমিট
T/T – ট্যাক্স টোকেন
D/L – ড্রাইভিং লাইসেন্স
I/C – ইনস্যুরেন্স সার্টিফিকেট
মাইক্রো/কার/বাস ভাড়ায় ব্যবহৃত না হলে
R/C – রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট
F/C – ফিটনেস সার্টিফিকেট
T/T – ট্যাক্স টোকেন
D/L- ড্রাইভিং লাইসেন্স
I/C – ইনস্যুরেন্স সার্টিফিকেট
মামলা
যথাযথ মনে করলে কর্তব্যরত যেকোনো পুলিশ কর্মকর্তা এ মামলা করতে পারেন। রাস্তায় তাৎক্ষণিক মামলার ক্ষেত্রে মামলা প্রদানকারী কর্মকর্তা যানবাহনের একটি ডকুমেন্ট জব্দ করেন। তবে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে মোটরযান আইন ছাড়াও নিয়মিত মামলা হতে পারে।
মামলা হলে করণীয়
গাড়ি আটক করার সময় পুলিশ একটি বা দুটি কাগজ জব্দ করবে এবং আপনাকে একটি রসিদ দেবে।
যেকোনো আইন ভাঙার জন্য মামলা হতে পারে। ডকুমেন্টারি বা অন্য কোনো কারণে মোটরযান আইনে মামলা হলে সেটা উদ্বেগজনক কিছু নয়।
ঢাকা শহরে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের চারটি জোন বা এলাকা (পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ) আছে। একজন ডেপুটি কমিশনার (ডিসি ট্রাফিক) প্রতিটি জোনের দায়িত্বে আছেন। কাজেই যেকোনো মামলার ক্ষেত্রে আগে বিবেচনা করতে হবে সেটি কোন এলাকার আওতাভুক্ত। কোন ট্রাফিক বিভাগের অধীনে মামলা হয়েছে, সেটা জরিমানার সময় যে টিকিট দেওয়া হয় তার পেছনে লেখা থাকে।
সংশ্লিষ্ট জোনের ডেপুটি কমিশনারের দপ্তরে গিয়ে কিছু দাপ্তরিক কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে খুব সহজেই মামলা নিষ্পত্তি করা যায়। এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্টভাবে জরিমানা প্রদান করতে হবে। বিচারক অথবা ডিসি ট্রাফিক জরিমানার অঙ্ক নির্ধারণ করেন। জরিমানা নির্ধারণকারী পূর্ণ জরিমানার চার ভাগের এক ভাগ পর্যন্ত জরিমানা করতে পারেন, এমনকি মওকুফও করতে পারেন। জরিমানা প্রদানের পর পরই জব্দ হওয়া ডকুমেন্ট বুঝে পাওয়া যায়।
ওয়ারেন্ট
নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করা না হলে ওয়ারেন্ট ইস্যুর জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা প্রেরণ করা হয়। আদালত থেকে ওয়ারেন্ট ইস্যুর পর পুলিশ কর্মকর্তারা রাস্তায় সংশ্লিষ্ট গাড়িটি আটক করেন এবং ওয়ারেন্ট ইস্যুর পর গাড়িটি ছেড়ে দেন।
ওয়ারেন্ট নিষ্পত্তি
ওয়ারেন্ট নিষ্পত্তির কাজটিও কঠিন নয়। ওয়ারেন্ট নিষ্পত্তির জন্য ওয়ারেন্ট নম্বরটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কোর্টে হাজির হয়ে ও জি.আর.ও (গেষ্ট রিলেশন্স অফিসার ) মাধ্যমে কিছু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হয়।
গাড়ি কিভাবে জিম্মায় নেবেন
সন্দেহজনক কারণে কিংবা নির্দিষ্ট অভিযোগে গাড়ি পুলিশ আটক করলে বা থানায় কোনো মামলা হলে গাড়িটি নিজের জিম্মায় নিতে সংশ্লিষ্ট আদালতে আবেদন করা যায়। প্রথমেই থানা থেকে মামলার এজাহারের ফটোকপি তুলতে হবে। সেইসঙ্গে গাড়ির নিবন্ধনের ফটোকপি নিয়ে একজন আইনজীবীর শরণাপন্ন হতে হবে। যেহেতু গাড়িটি থানায় আটক করা হয়েছে, আইনজীবী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নির্দিষ্ট শাখায় গিয়ে মামলার নথি পর্যবেক্ষণ করবেন। প্রথম দিনে আবেদন শুনানির পর সাধারণত আদালত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে (আইও) বিআরটিএ (বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি) থেকে গাড়ির মালিকানা নিরূপণ করে কোনো অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, যাচাই করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আদেশ দেবেন।
আদালতের আদেশ সাধারণত পরবর্তী কার্যদিবসে সংশ্লিষ্ট থানায় পৌঁছে যায়। থানায় যোগাযোগ করতে হবে, যেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদন অতিসত্বর থানা থেকে আদালতে প্রেরণ করেন। প্রতিবেদন থানা থেকে আদালতে পাঠানো হলে আইনজীবী নথি পর্যবেক্ষণ করে দেখবেন যে তা নথির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে কি না। এরপর আইনজীবী একটি দরখাস্তের মাধ্যমে আদালতকে অবহিত করবেন যে বিআরটিএ থেকে গাড়ির মালিকানা নিরূপণ করা হয়েছে। শুনানির সময় আদালতের সামনে উপস্থিত থাকতে হবে। আদালত বিআরটিএ প্রতিবেদন, তদন্তকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদন ও আইনজীবীর শুনানিতে সন্তুষ্ট হলে থানা কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেবেন আটক গাড়িটি জিম্মায় দেওয়ার জন্য। পরে তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে গাড়ি নিজের জিম্মায় নিতে পারবেন এই শর্তে যে মামলার তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজন হলে তিনি তা থানায় হাজির করবেন। এভাবে গাড়িটি জিম্মায় নিতে প্রায় এক মাস সময় লাগতে পারে।