সরকারি ব্যবস্থাপনায় খরচ তেমন না বাড়িয়ে দুটি হজ প্যাকেজের খসড়া করা হয়েছে। প্যাকেজ ১-এর আওতায় তিন লাখ ৫৪ হাজার ৭৪৫ আর প্যাকেজ ২-এর জন্য মোট খরচ দুই লাখ ৯৬ হাজার ২০৬ টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়, যা চলতি বছরের তুলনায় যথাক্রমে ৪২৯ ও ৪৩০ টাকা বেশি। সরকারি হজ প্যাকেজ অনুমোদনের পরপরই বেসরকারি হজ প্যাকেজ ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে হজ এজেন্সিস ইন বাংলাদেশ (হাব)। তারাও সরকারি প্যাকেজ ২-এর কাছাকাছি খরচ রাখার চেষ্টা করবে। তবে হজের জন্য এবার ফেব্রুয়ারিতেই টাকা জমা দিতে হবে। সেই সঙ্গে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন এবং মেশিন রিডেবল পাসপোর্টও বাধ্যতামূলক করেছে সৌদি সরকার।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব চৌধুরী মো. বাবুল হাসান জানান, এবার সৌদি সরকার বেশ আগেভাগেই হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেছে। এ কারণে অল্প সময়ের মধ্যে প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। এবার অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কেউ হজে যেতে পারবে না। সব কিছু বিবেচনায় রেখেই প্যাকেজ তৈরি করা হয়েছে।
হাবের সভাপতি ইব্রাহিম বাহার বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী আরো আট মাস পরে হজের কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা, কিন্তু সৌদি আরব সরকার এবার আগেই কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। তাই নিয়ম মেনে আমরাও প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে টাকা জমা দেওয়ার তারিখ নিয়ে। যত দূর জেনেছি আগামী ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই মোয়াল্লিম ফি আর বিমান ভাড়ার টাকা জমা দিতে হবে। প্যাকেজের অবশিষ্ট টাকা পরে নেওয়া হবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আমাদের দেশের মানুষ এত আগে হজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় না। তারা সাধারণত রোজার সময় বা তার কিছু আগে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। এই অবস্থায় আমরা পর্যাপ্ত হজযাত্রী পাব না। তা ছাড়া ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই বিমান ভাড়া নিতে হবে কেন? শুধু মোয়াল্লিম ফি নিলেই তো যথেষ্ট। গত মাসে এ বিষয়ে যখন ধর্ম মন্ত্রণালয়ে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক হয় তখন আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু সরকার আমলে নেয়নি। যাই হোক সব কিছু মিলিয়ে আমরা চলতি সপ্তাহেই বা আগামী সপ্তাহের শুরুতেই বেসরকারি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করব। আমাদের প্যাকেজও সরকারের প্যাকেজ ২-এর মতো হবে।’
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছরের ২২ সেপ্টেম্বর হজ অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ থেকে মোট এক লাখ এক হাজার ৭৫৮ জন এবার হজে যেতে পারবে। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১০ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৯১ হাজার ৭৫৮ জন হজে যাবে। চলতি বছর গত অক্টোবর মাসে হজ অনুষ্ঠিত হয়। চলতি বছর অনুষ্ঠিত হজ প্যাকেজ ১-এর মূল্য ছিল তিন লাখ ৫৪ হাজার ৩১৬ টাকা আর প্যাকেজ ২-এর মূল্য ছিল দুই লাখ ৯৫ হাজার ৭৭৬ টাকা।
এবার সৌদি আরব সরকার ইলেকট্রনিক হজ ব্যবস্থাপনা চালু করেছে। এ কারণে হজ ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত সব তথ্য অনলাইনে পাঠাতে হবে। ২১ জানুয়ারি থেকেই হজযাত্রীদের তথ্যাদি সৌদি আরব সরকারকে জানাতে হবে। ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া চলবে। এবার মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ছাড়া হজে যাওয়া যাবে না। হজযাত্রীদের জন্য মক্কা ও মদিনায় নির্ধারিত পরিমাণ জায়গাসহ বাসা ভাড়া করতে হবে। সব হজযাত্রীর জন্য সৌদি আরব সরকার অনুমোদিত ক্যাটারিং কম্পানির মাধ্যমে খাবার সরবরাহ করতে হবে। হজ এজেন্সিগুলোকে সৌদি আরবে নিজ নিজ এজেন্সির নামে ব্যাংক হিসাব খুলতে হবে। কোনো অবস্থায়ই তাসরিয়াবিহীন বাড়ি ভাড়া করা যাবে না এবং হজযাত্রীদের ভাড়া করা বাড়ি বা হোটেলেই থাকতে হবে। মক্কায় হারাম শরিফ থেকে দুই কিলোমিটার বা এর বেশি দূরে বাসা নেওয়া হলে হজযাত্রীদের আনা-নেওয়ার জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে।
গত ২৭ নভেম্বর হজ প্যাকেজের খসড়া চূড়ান্ত করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, অধিদপ্তর ও নানা পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্যাকেজ চূড়ান্ত করা হয়েছে।
সৌদি আরবে হজের আনুষঙ্গিক ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় দুটি হজ প্যাকেজ প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকারি ব্যবস্থাপনার দুটি প্যাকেজের হজযাত্রীদেরই মোয়াল্লিম ফি, ট্রেন ভাড়া, স্থানীয় সার্ভিস চার্জ, প্রশিক্ষণ ফি, আপৎকালীন ফান্ড, বিমান ভাড়ার জন্য এক লাখ ৫১ হাজার ৬৯০ টাকা নির্ধারিত ব্যাংকে জমা দিয়ে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সরাসরি বা অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। অবশিষ্ট টাকা ১০ জুনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এতে ব্যর্থ হলে কোনোভাবেই হজে যাওয়া যাবে না। এসব প্যাকেজের হজযাত্রীরা কোরবানির জন্য আনুমানিক ১০ হাজার ৫০০ টাকা আলাদাভাবে নেবে। প্রত্যেক হজযাত্রী এক হাজার ডলার সঙ্গে নিতে পারবে। সরকারি হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়া ২০১৪ সালের তুলনায় বাড়বে না।