প্রচ্ছদ > কেনাকাটা > ডিজিটাল ক্যামেরা কেনার আগে
ডিজিটাল ক্যামেরা কেনার আগে

ডিজিটাল ক্যামেরা কেনার আগে

শখ বা জীবিকা, কারণ যা-ই হোক না কেন ক্যামেরা কিনছেন অনেকেই। কিন্তু কোনো একটা কিনে ফেললেই তো আর হলো না। প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে জেনে-বুঝে কেনাটাই ভালো। ডিজিটাল ক্যামেরার চলই এখন বেশি। এতে ছবি তোলা খুব সহজ। লাইভ ভিউয়ের মাধ্যমে ছবি কেমন আসবে, তাও আগে দেখে নেওয়া যায়। রেজু্যলেশন, পিক্সেল, মেমোরি কার্ড ও এলসিডি ডিসপ্লে সুবিধার ওপর নির্ভর করে ডিজিটাল ক্যামেরা নির্বাচন করা উচিত। ক্যামেরা সম্পর্কে জানাশোনা আছে এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন আল-আমিন কবির

চাহিদা বুঝে ক্যামেরা
বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের সনি ক্যামেরা বিক্রেতা বদরুদ্দোজা মাহমুদ জানান, আপনি পেশাদার নাকি শৌখিন, তার ওপর নির্ভর করবে কোন ক্যামেরা আপনার প্রয়োজন। যদি শৌখিন হন, তাহলে ‘পয়েন্ট অ্যান্ড শ্যুট’ ক্যামেরাই যথষ্টে। বর্তমানে যেসব মধ্যম সারির পয়েন্ট অ্যান্ড শ্যুট পাওয়া যায় তাতে ফিক্সড লেন্সে ডিএসএলআরের কিছু সুবিধাও যোগ করা হয়েছে। ক্যামেরাগুলো দামে সস্তা, ওজনেও হালকা। বাড়তি লেন্সের ঝামেলা নেই। তাই এটি পকেটে পুরেও ঘুরে বেড়ানো যায়। এমনকি  সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য তাই ‘পয়েন্ট অ্যান্ড শ্যুট’ ক্যামেরাই উপযোগী। যাঁরা পেশাগত কাজে ক্যামেরা কিনতে চান, তাঁদের প্রয়োজন সর্বোচ্চ সুবিধাসম্পন্ন ডিজিটাল ক্যামেরা। যেটাতে ম্যানুয়াল ও অটোমেটিক-দুই মুডেই ছবি তোলার সুযোগ থাকবে; শাটার স্পিড, অ্যাপারচার, ফোকাস- এসব থাকবে। সাধারণত ডিজিটাল এসএলআর ক্যামেরায় এসব সুবিধা আছে।

মেগাপিক্সেল গুরুত্বপূর্ণ নয়
ফটোগ্রাফার মেসবাহ উদ্দিন ফাহাদ জানান, মেগাপিক্সেল যত বেশি হয়, ক্যামেরায় ছবির মানও তত ভালো হয়- এমনটিই মনে করে বেশির ভাগ মানুষ। তবে মেগাপিক্সেলের সঙ্গে ছবির মানের সম্পর্ক খুব একটা নেই। ক্যামেরার মেগাপিক্সেল বেশি হওয়া মানে ওই ক্যামেরার ছবি আকারে বড় করা যাবে। মাত্র পাঁচ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরায়ই ১২ বাই ১৮ ইঞ্চি মাপের ছবি প্রিন্ট নেওয়া যায়। তাই পাঁচ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরাকেই স্ট্যান্ডার্ড বলা যায়। ক্যামেরা কেনার সময় তাই মেগাপিক্সেলের দিকে চোখ না দিয়ে ক্যামেরায় অন্য কী সুবিধা আছে, সেদিকে নজর দেওয়া উচিত।

দেখে নিন আইএসও
আলো কম থাকলে, জুম করলে কিংবা হাত কাঁপা অবস্থায় ছবি তুললে তা ঝাপসা হয়ে যায়। আইএসওর গতি বেশি থাকলে এ ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ক্যামেরা কেনার সময় তাই আইএসওর গতি পরখ করে নেওয়া উচিত।
আইএসওর গতি বেশি হলে কম আলোয়ও ভালো ছবি তোলা যায়। এ ক্ষেত্রে ক্যামেরার শাটার স্পিডও বেশি থাকে। তাই কম আলোয়ও ছবি তুললে ঝাপসা হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
ক্যামেরার ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন আরেকটি জরুরি বিষয়। ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন থাকলে ক্যামেরা হালকা কেঁপে গেলেও ছবি ঝাপসা হয় না। তাই ক্যামেরায় ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন আছে কি না, তা অবশ্যই দেখে নিতে হবে।

অপটিক্যাল জুম
দূরের বস্তুকে কাছ থেকে দেখার জন্য ক্যামেরায় জুম ব্যবহার করা হয়। দূরের ছবি তোলার জন্য জুম তাই গুরুত্বপূর্ণ। আলোকচিত্রী রাসেল আহমেদ জানান, ক্যামেরায় সাধারণত দুটি জুম থাকে। একটি ডিজিটাল, আরেকটি অপটিক্যাল জুম। অপটিক্যাল জুমই দূরের বিষয়কে ক্যামেরায় কাছে দেখায়। কমপক্ষে ৮ এক্স জুম আছে এমন ক্যামেরা কেনা ভালো।

ম্যানুয়াল কন্ট্রোল
ফটোগ্রাফার শ্রাবণ রেজা জানান, এসএলআর ক্যামেরায় ম্যানুয়াল কন্ট্রোল থাকে। এতে শাটার স্পিড (সেন্সরে কতক্ষণ ধরে আলো পড়বে), অ্যাপারচার (সেন্সরে কী পরিমাণ আলো পড়বে), আইএসও স্পিড (সেন্সরের সংবেদনশীলতা), ফোকাস- এসব নিজের মতো বদলানো যায়। পয়েন্ট অ্যান্ড শ্যুট ক্যামেরায় এগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ঠিক হয়।

যেমন হবে ফোকাস
ফিক্সফোকাস ক্যামেরা সস্তা, তবে খারাপ নয়। এগুলোর ফোকাস করার ক্ষমতা স্থির বলে কিছু সীমাবদ্ধতা চলে আসে। অন্যদিকে অটো ফোকাস ক্যামেরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফোকাস করে। জুম লেন্স আছে এমন ক্যামেরায় অটো ফোকাস থাকাটা জরুরি। কিনলে অটো ফোকাসসহ কেনা উচিত।

যেখানে পাবেন
আমাদের দেশে শুধু ক্যামেরার জন্য আলাদা কোনো বাজার গড়ে ওঠেনি। তবে কম্পিউটার মার্কেটগুলোতে সাধারণত ক্যামেরা পাওয়া যায়। বাংলাদেশে ‘নাইকন’ ক্যামেরার পরিবেশক ফ্লোরা লিমিটেড। www.floralimited.com সাইট থেকে এই ব্যান্ডের ক্যামেরার মডেল ও ব্যবহারবিধি সম্পর্কে জানা যাবে। সাইটটিতে ফ্লোরার শোরুমের ঠিকানাও আছে। বাংলাদেশে ‘ক্যানন’ ক্যামেরার পরিবেশক জেএএন অ্যাসোসিয়েটস। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আইডিবি ভবনে তাদের শোরুম রয়েছে। ক্যানন ক্যামেরার খোঁজখবর এখান থেকেই পাওয়া যাবে। প্যানাসনিকের পরিবেশক এসিআই লিমিটেড। বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে তাদের একটি শোরুম আছে। সনি ক্যামেরার পরিবেশক রেংগস  ইলেকট্রনিক্স। ক্যামেরার খোঁজ পেতে সনির শোরুমে যেতে হবে। এ ছাড়া আইডিবি ভবনের বিসিএস কম্পিউটার সিটির অনেক দোকানে প্রচলিত প্রায় সব ব্যান্ডের ক্যামেরাই পাওয়া যাবে।
ক্যামেরার জন্য সুনাম আছে এমন কয়েকটি দোকান বসুন্ধরা সিটিতেও রয়েছে। এ মার্কেটের লেভেল ৬-এ রয়েছে সনি ব্রাভিয়া স্টোর। এ ছাড়া বায়তুল মোকাররম, এলিফ্যান্ট রোড ও স্টেডিয়াম মার্কেটে বিভিন্ন ব্যান্ডের ক্যামেরা পাওয়া যায়।

বাজারদর
দেশের বাজারে ‘পয়েন্ট অ্যান্ড শু্যট’ ৬ থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে কেনা যাবে। যাঁরা একটু দূর থেকে ছবি তুলতে চান, তাঁদের জন্য সুপার জুমিং আছে এমন ক্যামেরাই কেনা উচিত। দেশের বাজারে সর্বনম্নি ১৫ হাজার টাকায় এ ধরনের ক্যামেরা পাওয়া যায়। পেশাদারদের জন্য রয়েছে ডিজিটাল এসএলআর ক্যামেরা। এসএলআর ক্যামেরার সর্বনম্নি দাম ৩৫ হাজার টাকা।
স্মার্ট এই ডিজিটাল ক্যামেরাগুলো বাজারে ৯,০০০ থেকে ২৫০০০ হাজারের মধ্যে পাওয়া যায়। এর মধ্যে কিছু মডেল যেমন, সনি ‘এ ৪৮০’ ৯,৩০০ টাকা, ক্যানন ‘আইএস ২৯৫’ ১৫,৩০০ টাকা, ক্যানন ‘এসএস ১২০’ ২৩,০০০ টাকা, সনি ‘৫১০’ ৮,৪০০ টাকা, সনি ‘৫২০’ ৯,৫০০ টাকা, স্যামসাং ‘সিএস ৮০’ ৮,৭০০ টাকা এবং স্যামসাং ‘ডব্লিউ ৬৫০’ ২২,৫০০ টাকা বাজেটের মধ্যে পাওয়া যেতে পারে। বাজারদর উঠানামা করে, মডেল পছন্দ করে একটু খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন, ক্যামেরাটির দাম কত।

দেখে নিন রিভিউ
ক্যামেরা কেনার আগে ইন্টারনেট থেকে রিভিউ দেখে নিন। একসঙ্গে দু-তিনটি ওয়েবসাইট থেকে নির্দষ্টি ক্যামেরার রিভিউ দেখলে ক্যামেরার কোয়ালিটি সম্পর্কে অভিজ্ঞদের কাছ থেকে বিস্তারিত জানা যাবে। এখানে পেয়ে যাবেন ব্যবহারকারীদের মন্তব্যও| www.dpreview.com, www.reviews.cnet.com/digital-cameras, www.whatdigitalcamera.com, www.trustedreviews.com, www.cameralabs.com, www.pcmag.com/reviews/digital-cameras ও www.digitalcamerainfo.com সাইটগুলো ক্যামেরা রিভিউয়ের জন্য বেশ নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট।

Comments

comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*