কাপড় ধোয়া ও শুকানো কী আর কম ঝক্কি-ঝামেলার! তবে এ ঝামেলার হাত থেকে বাঁচতে সামর্থ্য থাকলে কিনতে পারেন ওয়াশিং মেশিন। কাপড় ধোয়া ও পানি ঝরানোর জন্য বেশ কাজে দেয় এই মেশিন। বাজার ঘুরে নানা ধরনের ওয়াশিং মেশিনের খোঁজখবর জানাচ্ছেন জাহিদ হোসাইন খান
নানা আকারের ওয়াশিং মেশিন
কাপড় ধোয়ার জন্য নানা ধরনের ওয়াশিং মেশিন বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। ট্রান্সটেক, ওয়ার্লপুল, এলজি, সিঙ্গার, প্যানাসনিক, ফিলিপস, ওয়ালটনসহ বেশ কিছু ব্রান্ডের ওয়াশিং মেশিন আছে। পরিবারের সদস্যসংখ্যার ওপর নির্ভর করে ওয়াশিং মেশিন কেনা উচিত। ঢাকার কারওয়ান বাজারের ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকসের শোরুমের বিক্রয় নির্বাহী হুমায়ুন কবির জানান, প্রধানত দুই ধরনের ওয়াশিং মেশিন কিনতে পাওয়া যায়। এগুলো হলো ড্রাম ও ফ্রন্ট লোডার। সাধারণ আকারের যেকোনো ওয়াশিং মেশিনে ধোয়া ও পানি ঝরানোর কাজ একই সঙ্গে করা যায়। তবে কোনো মেশিনই শতকরা ১০০ ভাগ কাপড়ের পানি ঝরাতে পারে না। ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পানি ঝরাতে পারে। বৈশিষ্ট্যভেদে কোনো মেশিন পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় বা আধা স্বয়ংক্রিয় (সেমি অটোমেটিক) আবার বেশ কিছু ম্যানুয়াল ওয়াশিং মেশিন পাওয়া যায়।
ওয়াশিং মেশিনে অটো বাটন টিপে পানি ও কাপড় স্পিন করাসহ সব কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবেই হয়। এ ছাড়া গুঁড়া সাবান বা ডিটারজেন্ট পাউডার রাখার জন্য আলাদা বক্সও থাকে। কিছু মেশিনে হট ওয়াশের ব্যবস্থাও থাকে। ফলে বাটন টিপলেই মেশিনে গরম পানি সরবরাহ হয়। এ ধরনের মেশিনে কাপড় ধোয়ার জন্য মোটামুটি সময় লাগে ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট। আবার ম্যানুয়াল ওয়াশিং মেশিনে প্রতিটি কাজ আলাদা বাটন টিপে করতে হয়।
ঢাকার মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের সিঙ্গার শপের ব্যবস্থাপক মো. সাইফুজ্জামান জানান, সিঙ্গারের ছয় কেজি টাব ওয়াশার ওয়াশিং মেশিনের দাম সাত হাজার ৭০০ টাকা। এ ছাড়া সিঙ্গারের আট কেজি ধারণক্ষমতার সেমি অটোমেটিক মেশিনের দাম ১২ হাজার ৬০০ টাকা।
ট্রান্সটেক ওয়াশিং মেশিন
ট্রান্সকম ডিজিটালে ট্রান্সটেক ও ওয়ার্লপুল ব্রান্ডের ওয়াশিং মেশিন পাওয়া যায়। ট্রান্সটেকের সিঙ্গেল টাব সেমি অটোমেটিক মেশিনের দাম পড়বে সাত হাজার ৯০০ টাকা। আকারে ছোট হওয়াতে এটি ছোট পরিবার ও ব্যাচেলররা ব্যবহার করতে পারবেন। আর টুইন টাব সেমি অটোমেটিকের দাম পড়বে ১১ হাজার ৬০০ টাকা।
ওয়ার্লপুল ওয়াশিং মেশিন
৬ দশমিক ৫ কেজি ধারণক্ষমতার ওয়ার্লপুলের ওয়াশিং মেশিনের দাম পড়বে ১৮ হাজার ৯০০ টাকা। আর ৬ দশমিক ২ কেজি ধারণক্ষমতার ওয়াশিং মেশিনের দাম ১৪ হাজার ৬০০ টাকা। ছয় কেজি ধারণক্ষমতার পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় ওয়াশিং মেশিনের দাম ২৮ হাজার ৯০০ টাকা, সাত কেজির ৩৬ হাজার ৯০০ ও আট কেজির দাম পড়বে ৩৯ হাজার ৯০০ টাকা।
সিঙ্গার ওয়াশিং মেশিন
সিঙ্গারের ছয় কেজি টাব ওয়াশার ওয়াশিং মেশিনের দাম সাত হাজার ৭০০ টাকা। আট কেজি আংশিক অটোমেটিক মেশিনের দাম ১২ হাজার ৬০০ টাকা। ছয় কেজির পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় মেশিনের দাম পড়বে ১২ হাজার ৯০০ টাকা।
ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিন
ছয় কেজি ধারণক্ষমতার ওজনের টপ লোডিং ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিনের দাম ২৫ হাজার টাকা, ফ্রন্ট লোডিং ওয়াশিং মেশিনের দাম ৩৭ হাজার টাকা।
স্যামসাং ওয়াশিং মেশিন
স্যামসাং কোম্পানির ওয়াশিং মেশিনগুলো দুই ধরনের অটো ও ম্যানুয়াল সিস্টেমের। ৬ দশমিক ২ কেজির মেশিনের দাম ২৭ হাজার ৮০০ টাকা, ৬ দশমিক ৫ কেজির দাম ২৮ হাজার ৮০০ টাকা এবং সাত কেজি ধারণক্ষমতার মেশিনের দাম ৩০ হাজার ৮০০ টাকা।
এলজি ওয়াশিং মেশিন
এলজি ব্রান্ডের বেশ কটি মডেলের ওয়াশিং মেশিন কিনতে পাওয়া যায়। সাত কেজি ধারণক্ষমতার অটো ওয়াশিং মেশিনের দাম পড়বে ২৭ হাজার ১০৫ টাকা, নয় কেজি ধারণক্ষমতার দাম ৩৪ হাজার ৭৫৫ টাকা, ১২ কেজির দাম পড়বে ৩৭ হাজার ২৫৫ টাকা। এ ছাড়া ম্যানুয়াল পাঁচ কেজি ধারণক্ষমতার ওয়াশিং মেশিনের দাম ১৬ হাজার ২৮৫ টাকা।
অন্যান্য ব্রান্ডের ওয়াশিং মেশিন
শার্প ব্রান্ডের ওয়াশিং মেশিন পাওয়া যাবে ধারণক্ষমতাভেদে ১৮ হাজার ৫০০ থেকে ৪২ হাজার টাকার মধ্যে। গোল্ডস্টার ব্রান্ডের ৬ দশমিক ৫ কেজি ধারণক্ষমতার মেশিনের দাম পড়বে ১৯ হাজার ৫০০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এ ছাড়া বাজারে ফিলিপস, প্যানাসনিক, হায়েস, র্যাংগসসহ বিভিন্ন ব্রান্ড ও নন ব্রান্ডের ওয়াশিং মেশিন কিনতে পাওয়া যায়।
খেয়াল রাখুন
বেশি তাপমাত্রার গরম পানি মেশিনে ব্যবহার করা যাবে না।
স্পিনিংয়ের সময় ওয়াশিং মেশিনের ঢাকনা বন্ধ রাখুন।
ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ধোয়ার ক্ষেত্রে কাপড় ধোয়ার সাবানের পরিবর্তে মেশিনের জন্য লিকুইড সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার করুন।
কাপড়ের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে আলাদা আলাদা ভাবে ধুতে হয়। সুতি কাপড়ের সঙ্গে ভারী জিনম ধুবেন না।
কাপড়ের ময়লার ওপর নির্ভর করেই ডিটারজেন্ট ব্যবহার করুন।
ওয়াশিং মেশিনের ভোল্টেজ ওঠানামা করলে মেশিনের ক্ষতি হতে পারে, এ জন্য ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহার করতে পারেন।
মেশিনে ধোয়া কাপড় অবশ্যই রোদে বা বাতাসে কিছুক্ষণ মেলে রাখবেন।
মেশিনের পানির পাইপ সব সময় পরিষ্কার রাখুন।
কন্ট্রোল প্যানেলে পানি বা ডিটারজেন্ট যাতে প্রবেশ না করতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখুন।