প্রচ্ছদ > ক্যারিয়ার > টিপস অ্যান্ড ট্রিকস > বছর শেষে কাজের মূল্যায়ন
বছর শেষে কাজের মূল্যায়ন

বছর শেষে কাজের মূল্যায়ন

বছরান্তে চলে ফি বছরের কাজের হিসাব-নিকাশ। কারো জোটে পদোন্নতি বা ইনক্রিমেন্ট, কারো কিছুই জোটে না। বার্ষিক মূল্যায়নের নানা বিষয়ে পরামর্শ। লিখেছেন আরাফাত শাহরিয়ার

চূড়ান্ত মূল্যায়ন পর্ব শুরু হয় বছরের শেষে। তবে এটার কার্যক্রম শুরু হয়ে যায় বছরের শুরুতে। কর্মীকে এ জন্য অনুসরণ করতে হয় নানা নির্দেশনা। বছরের শুরুতেই ঊর্ধ্বতনরা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের ফরম নিয়ে বসেন। ফরমে পাঁচ-সাতটি পয়েন্ট দেওয়া হয়। এটা দেখে আপনাকে কাজ করতে হবে। অনেক অফিসে অবশ্য লিখিত কাগজপত্রের বালাই নেই। উদারহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপকের ৯০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার একটি দায়িত্ব বর্তাল। একসঙ্গে এতজনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া তো আর সম্ভব নয়! তাই প্রাথমিকভাবে ৪০ জনকে নির্বাচন করলেন, ধাপে ধাপে অন্যদেরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলেন। এ ক্ষেত্রে সবার প্রশিক্ষণ শেষ করতে পারলে আপনি লক্ষ্যে পৌঁছে গেলেন। এ ধরনের কত দায়িত্বই তো থাকতে পারে। সেসব ক্ষেত্রে সাফল্যের হারের ওপরই নির্ভর করবে মূল্যায়ন।

যেভাবে মূল্যায়ন
সাপ্তাহিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষান্মাসিক- এভাবে কাজগুলোকে ভাগ করে নিলে প্রতিষ্ঠান ও কর্মী উভয়ের জন্যই সুবিধা। ধরা যাক, প্রথম মাসে ১০ শতাংশ কাজ করার কথা ছিল। সেটা কত দূর এগোল তা দেখতে হবে। তিন মাস শেষে দেখলেন টার্গেট অনুযায়ী কাজ এগোল কি না। ছয় মাস পর দেখলেন, কতুটুকু করার কথা ছিল, আর অগ্রগতি কতটুকু।
বহুজাতিক ও আধুনিক অফিসগুলোয় মূল্যায়নের আলাদা ফরম থাকে। একে বলা হয় ‘অ্যানুয়াল অ্যাপ্রেইজল ফরম’। এতে আপনি কাজের ফিরিসি্ত লিখলেন এভাবে- ১. ট্রেনিং ক্যালেন্ডার তৈরি করেছিলাম, ২. বিভাগীয় প্রধানদের মধ্যে তা বিতরণ করা হয়েছে, ৩. ক্যালেন্ডার অনুসারে প্রতি মাসে প্রশিক্ষণ দিয়েছি, ৪. প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে সময়মতো সাড়া পেয়েছি, ৫. বছরের প্রথম ছয় মাসে ৪০ জনের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। পরে ২৫ জনের প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছি। ডিসেম্বরে গিয়ে দেখা গেল, প্রশিক্ষণ নিতে তিনজন বাদ রয়ে গেছেন। তাঁরা ডাকে সাড়া দেননি।
ধরা যাক, বিজনেস পলিসি তৈরি, স্যালারি সার্ভে, ইউনিয়ন নেগিসিয়েশন, বেতন কাঠামো তৈরিসহ যেসব কাজ করার কথা ছিল তার সব উদ্যোগই নিয়েছেন। কিন্তু কাজের কিছু অংশ করতে পারেননি। দেখা গেল ৯৩ শতাংশ কাজ হয়েছে, বাকিটা হয়নি। কেন হয়নি, এর ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। হয়তো বিজনেস পলিসি আপ-টু ডেট হয়নি, ভেতরে কিছু ত্রুটি রয়ে গেছে। আটটি প্রতিষ্ঠানের স্যালারি সার্ভে করার কথা ছিল, ৯টি হয়েছে। এ ধরনের ঘাটতিতে পয়েন্ট কাটা যাবে।

থাকতে পারে রেটিং
ফরমে রেটিংও থাকতে পারে। ৯০ থেকে ১০০ পেলে তা হতে পারে ‘এক্সিলেন্ট’। ৮০ থেকে ৮৯ পেলে তা হতে পারে ‘গুড’, ৭০ থেকে ৭৯ হলে তা হতে পারে ‘এভারেজ’। এর নিচে হলে হতে পারে ‘পোর’। আপনি কোনটির মধ্যে পড়ছেন তা নির্ভর করছে বছরের কাজের ওপর।
কর্মীর কোথাও ঘাটতি বা দুর্বলতা আছে কি না, প্রশিক্ষণের দরকার আছে কি না, ইংরেজি, তথ্যপ্রযুক্তি বা যোগাযোগ দক্ষতার ঘাটতি আছে কি না- এসব বিষয় থাকতে পারে বার্ষিক মূল্যায়ন ফরমের দ্বিতীয় ভাগে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পয়েন্ট ধরে ধরে বলবেন, ‘আপনি বিজনেস প্লান করেছেন’, ‘কমিউনিকেশনে পুরোটা সফল হতে পারেননি’, ‘আইটি প্রশিক্ষণ দরকার’। একমত হওয়ার পর ফরমে উভয়কে সই করতে হবে। শতভাগ সফল হলে আপনি দাবি করতেই পারেন- ‘আমি সব কাজ করেছি, পদোন্নতি আমার প্রাপ্য।’

প্রকাশ্যও হতে পারে
প্রতিষ্ঠানভেদে মূল্যায়ন পদ্ধতিতে তফাত থাকবে- এটাই স্বাভাবিক। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে মূল্যায়ন করা হয় গোপনে। তবে অনেক বেসরকারি আধুনিক অফিসে বড় কর্তা, কর্মী মুখোমুখি বসেই বার্ষিক মূল্যায়ন করা হয়। গোপনীয়তার নীতি অবলম্বন করলে অনেক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের জন্য তা হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। কর্মী নিজের ভুল বুঝতে পারেন না। পদোন্নতি না পেয়ে প্রতিষ্ঠানের ওপর অভিমান করেন। কাজে মনোযোগ আসে না। অথচ বিষয়টি ধরিয়ে দিলে তিনি নিজের স্বার্থেই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার চষ্টো করবেন- এটাই স্বাভাবিক।

জুটতে পারে পদোন্নতি
কাজ ভালো করলে জুটতে পারে পদোন্নতি। কোনো কর্মী একটি কাজে দুই থেকে আড়াই বছর থাকলে বার্ষিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে পদোন্নতি দেওয়া অনেকটাই প্রয়োজনীয়তার পর্যায়ে চলে আসে। অন্যথায় তিনি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে চলে যেতে পারেন। অনেক প্রতিষ্ঠান তাই প্রশিক্ষিত ও দক্ষ কর্মীকে ধরে রাখার জন্য পদোন্নতি দিয়ে পুরস্কৃত করে।
পদোন্নতি না জুটলে, নূ্যনতম ইনক্রিমেন্ট দেওয়া না হলে কী হয়- এটিও নির্ভর করে কাজের ওপর। কেউ চার-পাঁচটি ইনক্রিমেন্ট জুটিয়ে নিলেও দু-একটি নিয়েই কারো কারো সন্তুষ্ট থাকতে হয়। ইনক্রিমেন্টের রেটও থাকতে পারে। ধরা যাক, আড়াই থেকে ২৫ শতাংশ। একটি অফিসে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের চাহিদা বেশি থাকে। কাজ সন্তোষজনক হলে তাঁকে ভালো ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হতে পারে। অন্যদিকে অফিসে সেলস বা মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ বেশি থাকায় তাঁদের হয়তো ইনক্রিমেন্টের হার তুলনামূলক কম হবে। তবে কেউ যদি সাফল্যের দিক থেকে অন্যদের ছাড়িয়ে যান, তাঁকে আলাদাভাবে পুরস্কৃত করারও একটা ব্যাপার থাকে।

টিপস অ্যান্ড ট্রিকস
লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের সময়ই অফিসকে বলে নিতে হবে, এই কাজগুলো আমি করতে পারব, এটা করা আমার জন্য কঠিন হয়ে যাবে।
কথা বলে নিন লজিস্টিক সাপোর্টের বিষয়েও। অফিসের বড়কর্তাকে বলুন, কাজের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য এই লোকবল বা সাপোর্টগুলো না হলেই নয়।
কাজ নিয়ে যখনই কোনো সমস্যা হবে, বিষয়টি বসকে জানাতে হবে। কাজে কোনো বাধা আসতে পারে। দেখা গেল কোনো বিভাগ থেকে তথ্য পাচ্ছেন না, কোনো বিভাগ কাজের ব্যাপারে সাহায্য করছে না। বিষয়টি বসের কাছে তুলে ধরলে তিনি সাহায্য করতে পারেন।
বার্ষিক মূল্যায়নের সময় সততার পরিচয় দিতে হবে। কোনো কিছু গোপন করা যাবে না।
কাজ করতে ব্যর্থ হলে অজুহাত না দেখিয়ে খোলামেলাভাবে বলতে হবে, এ কারণে আমি কাজটি পুরোপুরি করতে পারিনি।
মূল্যায়ন নিয়ে কোনো সমস্যা হলে বসকে ভালোভাবে বুঝিয়ে বলুন। কোনো অবস্থায়ই তাঁর সঙ্গে তর্কে জড়াবেন না।

Comments

comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*