প্রচ্ছদ > ক্যারিয়ার > বাড়তি আয় > চাকরির পাশাপাশি বাড়তি আয়
চাকরির পাশাপাশি বাড়তি আয়

চাকরির পাশাপাশি বাড়তি আয়

শুধুমাত্র চাকরির বেতন দিয়ে পরিবারের ভরণপোষণ চালাতেই অনেকে হিমশিম খান। সন্ধান করেন চাকরির পাশাপাশি বাড়তি আয়ের সুযোগ। কিন্তু এমন কোনো সুযোগ আছে কি, যা চাকরির পাশাপাশি করা সম্ভব? এ বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন ব্রিজ ইনস্টিটিউট অব ট্রেনিং অ্যান্ড কনসালট্যান্সির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আখতারুজ্জামান।

অনেক প্রতিষ্ঠানে চাকরির পাশাপাশি অন্য কিছু করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকে। আপনি যদি শর্তটি মেনে নিয়ে নথিপত্রে সই করে থাকেন এবং এর পরও প্রতিষ্ঠানের অনুমতি ছাড়া আয় করেন, তাহলে প্রতিষ্ঠান আপনার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে। আপনি চাকরিও হারাতে পারেন। ফলে নিশ্চিত হয়ে নিন, আপনার প্রতিষ্ঠানে এমন কোনো নিষেধাজ্ঞা আছে কি না। একটা কথা মনে রাখবেন, আপনার প্রতিষ্ঠানে এ রকম কোনো নিষেধাজ্ঞা যদি না-ই থাকে, তাহলে আগেই অনুমতি চাওয়ার জন্য হৈচৈ করবেন না। আপনি বাড়তি আয়ের জন্য অফিস-সময়ের বাইরে কোথাও কাজ করতে পারবেন কি না, এটি আপনার নিয়োগপত্রে বা কোনো নোটিশের মাধ্যমে বা সেবানীতি চুক্তিতে (সার্ভিস রুল অ্যাগ্রিমেন্ট) উল্লেখ থাকার কথা। যদি আপনাকে জানানো হয়, তাহলে কাজ শুরু করার আগে লিখিত অনুমতি নিতে ভুল করবেন না।

দ্বিতীয় যে বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি তা হলো, সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সবার পক্ষে চাকরির পাশাপাশি বাড়তি আয় করা সম্ভব হয় না। এর প্রধান কারণ, সবার চাপ সামলানোর ও পরিকল্পনা করার ক্ষমতা সমান নয়। এ দুটি বিষয় ছাড়া আরো অনেক যোগ্যতা প্রয়োজন আছে। অন্যথায় বিষয়টি অনেক জটিল হয়ে পড়ে। অনেকেই চাকরি ও বাড়তি আয়ের জন্য কার্যক্রম কোনোটিই ঠিকভাবে সামলাতে পারেন না, ফলে দুদিকেই সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

চাকরির পাশাপাশি বাড়তি আয় করতে হলে যেসব বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবেঃ

* বাড়তি কাজ করার জন্য বাড়তি সময় প্রয়োজন। সময়ের সঙ্গে কাজের সম্পর্ক নিবিড়ভাবে জড়িত। আপনি কখন বাড়তি কাজ করবেন, সেটা নির্দিষ্ট করুন। 
* অনেকে যে কাজই করেন নিখুঁতভাবে করেন, কিন্তু কম কাজ করেন। অনেকে হয়তো নিখুঁতভাবে করেন না, চলনসই এবং পরিমাণে অনেক কাজ করেন। মানে জ্যাক অব অল মাস্টার অব নান। নিখুঁতভাবে কাজ করতে সময়ের প্রয়োজন। আপনার হাতে যেহেতু সময় খুব কম এবং আপনাকে অনেক কাজ একসঙ্গে করতে হবে, ফলে পারফেকশনিস্ট বা খুঁতখুঁতে হলে জটিলতা বাড়ার আশঙ্কা আছে। বাড়তি আয়ের জন্য খুব ভালো কাজ করব, কিন্তু শ্রেষ্ঠ কাজ নয়। ঝামেলামুক্ত, পরিষ্কার নীতি। অথবা সেরা কাজ করবেন কিন্তু পরিমানে অনেক কম। ফলে কম কাজ দিয়ে বেশি আয় করার পথ আপনাকেই বের করতে হবে।
* যোগ্যতা যত বাড়াবেন কাজের সুযোগও তত তৈরি হবে। ফলে সময় পেলেই ভালো লাগে এমন নানা বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নিন। প্রশিক্ষণ নেয়া থাকলে তা কখনো বৃথা যায় না।
* সবার সঙ্গে পেশাদার সুসম্পর্ক বজায় রাখুন। কাজ পাওয়ার জন্য সম্পর্ক ও সুনাম জরুরি।
* সবার সঙ্গে ভালো যোগাযোগ রাখুন। সুযোগ পেলেই যোগাযোগ করুন। রাস্তায় যখন জ্যামে বসে থাকেন বা কারো জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন, এ সময়গুলোতে ফোনে যোগাযোগের কাজটি সেরে ফেলুন। কে কখন আপনাকে কাজের সন্ধান দেবে বলা যায় না।
* আপনি কোন ধরনের কাজ করবেন সেটা আপনাকেই ঠিক করে নিতে হবে। এটা মূলত তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে-
ক. আপনার যোগ্যতা, খ. আপনার সামর্থ্য (শারীরিক ও মানসিক) ও গ. নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপনার বাড়তি কাজ করার ক্ষমতা। এক্ষেত্রে সৃষ্টিশীল, খণ্ডকালীন ও সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে বাড়তি কাজের সুযোগ বেশি পাওয়া যায়।
* যেকোনো কাজেই আপনাকে অনেক দ্রুত করতে হবে। কোনোভাবেই সময় নষ্ট করা যাবে না। যতটা সম্ভব সময়কে কাজে লাগাতে হবে। বাড়তি কাজ করতে গেলে গড়িমসি, আলসেমি, ঢিলেমি ইত্যাদির স্থান নেই। এক কথায়, সময়ানুবর্তী হতে হবে।
* যেকোনো কাজ সুশৃঙ্খলভাবে করতে হবে। আপনার নথিপত্র, স্টেশনারি, পোশাক-পরিচ্ছদ, কোন কাজ কখন করবেন সব কিছু গোছানো হতে হবে। বিশৃঙ্খল হলেই ঝামেলায় পড়বেন।
* অনেক কাজ করার জন্য মানসিক শক্তি প্রয়োজন। সারা দিন কাজ করে যদি সন্ধ্যার পর আবারও নতুন কাজ নিয়ে বসেন, আপনাকে অনেক পরিশ্রমী আর মানসিকভাবে শক্তিশালী হতে হবে। পুরো সপ্তাহ কাজ করার পর ছুটির দিনেও কাজ থাকতে পারে। সংসার সামলানো, সামাজিক দায়িত্ব পালন, প্রিয়জনদের প্রতি কর্তব্য- সবই সামলাতে জানতে হবে। সুতরাং মনোবল অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
* পাশাপাশি শরীরও সুস্থ থাকা চাই। ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়লে বা কাজে ক্লান্তি এলে বেশি এগোতে পারবেন না। তাই শরীর সুস্থ রাখার জন্য বাড়তি সচেতন হোন।
* বাড়তি কাজের জন্য বাড়তি জ্ঞানার্জনও দরকার। বেশি বেশি বই পড়ুন। পত্রিকা, ম্যাগাজিন, জার্নাল পড়ুন। টিভি দেখুন। দেশ-বিদেশের খবরাখবর সম্পর্কে জানুন।

আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী যতটুকু পারা যায় চেষ্টা করুন। চেষ্টা থাকাটাই আসল। চেষ্টা আর সদিচ্ছা থাকলে পৃথিবীতে সব কিছুই করা সম্ভব। 

Comments

comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*