দেশের প্রতিটি উপজেলায় বিদেশি ভাষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিদেশগামী জনশক্তির ভাষাগত দক্ষতা বাড়ানো এ উদ্যোগের প্রধান লক্ষ্য। আরবি, স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ ও জার্মান ভাষা শেখানো হবে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে। তবে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারের কথা চিন্তা করে আরবি ভাষা প্রশিক্ষণেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যগামী শ্রমিকদের ১০ দিনের আরবি ভাষা প্রশিক্ষণ গ্রহণ বাধ্যতামূলক হচ্ছে। প্রশিক্ষণের জন্য ইতিমধ্যে উপজেলাভিত্তিক প্রশিক্ষক প্যানেল তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘ইস্টাবলিশমেন্ট অব ফরেন ল্যাংগুয়েজ ট্রেনিং সেন্টারস-২’ (এফএলটিসি-২) প্রকল্পের আওতায় এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে আগামী ডিসেম্বরে জেলা পর্যায়ে স্নাতকোত্তর কলেজকেন্দ্রিক এবং জুলাইয়ে উপজেলা পর্যায়ে সরকারি স্কুল অথবা মডেল স্কুলকেন্দ্রিক এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত মাসে অনুষ্ঠিত এফএলটিসি-২ প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটির সভায় আরবিসহ অন্যান্য ভাষা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে প্রতিটি উপজেলায় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সুবিধাসহ ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, এফএলটিসি-২ প্রকল্পের ধারাবাহিকতায় নতুন প্রকল্প গ্রহণ, মধ্যপ্রাচ্যগামী শ্রমিকদের জন্য কমপক্ষে ১০ দিনের আরবি ভাষা প্রশিক্ষণ কোর্স বাধ্যতামূলক করা, আরবি ভাষা প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণের জন্য এ ভাষায় দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের উপজেলাভিত্তিক প্যানেল তৈরি, আরবি ভাষা প্রশিক্ষণ কোর্স আধুনিকায়ন এবং স্কুল ও মাদ্রাসার আরবি শিক্ষকদের জন্য আরবি ভাষা প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
এ সিদ্ধান্ত অনুসারে এরই মধ্যে উপজেলাভিত্তিক ভাষা প্রশিক্ষকদের প্যানেল তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। আরবি, স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ ও জার্মান ভাষা প্রশিক্ষণদানে যোগ্য এবং সংশ্লিষ্ট ভাষাভাষী দেশে কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের এ প্যানেলভুক্ত করা হচ্ছে। এ প্রশিক্ষকদের খণ্ডকালীন নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
ভাষা শিক্ষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সম্পর্কে শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, আরবি ভাষা জাতিসংঘের বহুল ব্যবহৃত তিন ভাষা এবং মধ্যপ্রাচ্যের ২৭টি দেশের রাষ্ট্রীয় ভাষা। তাই মধ্যপ্রাচ্যে কর্মসংস্থানসহ রেমিট্যান্সের হার বাড়ানোর জন্য আরবি ভাষা শিখন ও প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতে হবে। আরবি ভাষা প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণ হলে বৈদেশিক কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে এবং তুলনামূলক উন্নতমানের কাজে আমাদের জনশক্তি সম্পৃক্ত হতে পারবে। এ জন্যই উপজেলা পর্যায়ে ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এফএলটিসি-২-এর প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন জানান, দেশে বর্তমানে বিদেশি ভাষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে ১২টি। ২০০৮ সাল থেকে এগুলো কাজ করছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জেলা পর্যায়ের আরো ১৮টি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজে এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলা হচ্ছে। আগামী বছরের জুলাইয়ের দিকে উপজেলা পর্যায়ে বিদেশি ভাষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান। যেসব উপজেলায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে, সেগুলোতে এবং যেখানে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই, সেখানে মডেল স্কুলে এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলা হবে বলেও তিনি জানান।
দেশের প্রতিটি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটেও ভাষা শিক্ষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং কম্পিউটার ল্যাব স্থাপনেরও উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ জন্য স্বার্থসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকারের সহযোগিতা চাওয়ারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ভিন্ন ভাষার কোর্স চালু করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বিদেশযাত্রা ছাড়াও দীর্ঘমেয়াদে দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য ইংরেজি ও আরবি স্পোকেন বাধ্যতামূলক করার পদক্ষেপ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, জনশক্তি প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান ব্যুরো বর্তমানে তিন দিনের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, তিন দিনে যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তা কোন কাজে আসছে না। আর এ প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা কেবল রাজধানীতেই রয়েছে। এ জন্য বিদেশগামী শ্রমিকদের জন্য উপজেলা পর্যায়ে ১০ দিনের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।