বিসিএস ক্যাডার হওয়া অনেকেরই স্বপ্ন। বিসিএস পরীক্ষার শেষ ধাপ ভাইভায় ভালো করার জন্য চাই জোর প্রস্তুতি। বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস থাকলেও ভাইভার কোনো নির্দিষ্ট সিলেবাস নেই। দরকারি পরামর্শ ও টিপস দিয়েছেন ৩৫তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার রবিউল আলম লুইপা

বিসিএস ভাইভার প্রস্তুতি নিতে পারেন তিন স্তরে—
♦ ১. প্রথমে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা, অনার্স বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিজে নিজেই নোট করবেন। এর জন্য—
ক) নিজের নামের অর্থ, আপনার নামে কোনো স্বনামধন্য ব্যক্তি, আপনার জন্মতারিখ বা সালে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির জন্ম ও ঘটনাগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। সচরাচর সব ভাইভা শুরু হয় Introduce yourself প্রশ্নটি দিয়ে।
খ) আপনার স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকাল, ওই প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করা বিখ্যাত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানপ্রধানের নাম ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ের তথ্য সংগ্রহ করে নোট করবেন। যেমন—৩৫তম বিসিএস ভাইভায় আমাকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান স্যার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন (তিনি তত্কালীন ইউজিসির চেয়ারম্যান ছিলেন)।
গ) আপনার নিজ জেলা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য : যেমন—জেলার আয়তন, সীমানা, নামকরণ, প্রতিষ্ঠা সাল, জনসংখ্যা, শিক্ষার হার, প্রধান ধর্ম ও উপজাতি, উপজেলা, বিখ্যাত ব্যক্তি, নদী, দর্শনীয় স্থান, পত্রপত্রিকা, সংসদের আসন ও সংসদ সদস্যদের নাম, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম, মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বিভিন্ন ঘটনা, শত্রুমুক্তির তারিখ, ভাষাসৈনিকদের নাম, চিহ্নিত রাজাকারদের নাম, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনও, জেলা ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের নাম জেনে যেতে হবে।
ইংরেজিতেও বলা হতে পারে, Introduce your district.
ঘ) আপনার অনার্সে পঠিত বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। এ ক্ষেত্রে আপনার অনার্সের সিলেবাস থেকে কোর্সগুলোর নাম, বেসিক বিষয়, আপনার পঠিত বিষয়ের জনকসহ সংশ্লিষ্ট যেকোনো বিষয়বস্তুর ওপর প্রশ্ন হতে পারে। অনেক পরীক্ষার্থীর ধারণা, শুধু জেনারেল ক্যাডার চয়েজ দিলে সংশ্লিষ্ট বিষয় থেকে কিছু জিজ্ঞেস করে না। এটা একেবারে ভুল ধারণা। জেনারেল ক্যাডারে ভাইভা দিলেও আপনার পঠিত বিষয় থেকে প্রশ্ন করা হতে পারে। কারণ আপনি উচ্চশিক্ষায় যা পড়েছেন, তা নিয়ে জিজ্ঞেস করলেই আপনার দক্ষতা বোঝা যাবে।
♦ ২. বিসিএস আবেদনের ক্যাডার চয়েজ তালিকায় আপনার পছন্দের ক্যাডারসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পড়াশোনা করে যাবেন। সাধারণত আপনার পছন্দের প্রথম ও দ্বিতীয় ক্যাডার নিয়ে জিজ্ঞেস করা হয়। এর জন্য—
ক) প্রত্যেক ক্যাডারসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে গাইড বই পাবেন বাজারে, ভাইভা প্রিপারেশনের জন্য। প্রথমেই প্রফেসরসের বিসিএস ভাইভা সহায়িকা (সব ক্যাডার); অ্যাসুরেন্স, ওরাকল বা অন্যান্য প্রকাশনীর পররাষ্ট্র, প্রশাসন, পুলিশ ও অন্যান্য ক্যাডারসংশ্লিষ্ট বই থেকে আপনার পছন্দের ক্যাডারের বিস্তারিত জেনে নেবেন।
খ) আপনার পছন্দের ক্যাডারসংশ্লিষ্ট প্রশ্নের ধরন জানতে আপনার আগের ভাইভাপ্রার্থীদের ভাইভা প্রশ্নগুলো সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করতে পারেন। ফেসবুকের জব প্রিপারেশন-সংক্রান্ত গ্রুপ ও পেইজ, যেমন—BCS : Our Goal, BCS Viva Campaigner, Zakir’s BCS Special. এ ক্ষেত্রে আপনার জন্য সহায়ক হতে পারে।
গ) আপনার পছন্দের ক্যাডারের পদসোপান, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও এর সচিব এবং মহাপরিচালকের নাম, সংশ্লিষ্ট পদক, ক্যাডারের স্বনামধন্য সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের নাম, ট্রেনিং একাডেমি, আপনার পদায়নস্থল, বিভিন্ন পদের দায়িত্ব ও ক্ষমতা, সর্বোচ্চ স্তর বা গ্রেড, পছন্দের ক্যাডার, এর সঙ্গে নিজের পঠিত সাবজেক্টের সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত পড়াশোনা করে যাবেন।
ঘ) আপনার পছন্দ প্রশাসন ক্যাডার হলে—সহকারী কমিশনার, ইউএনও, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনারের দায়িত্ব ও ক্ষমতা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির সময় প্রয়োগকৃত আইন ও দণ্ড, কেন্দ্রীয় প্রশাসন ও মাঠ প্রশাসন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, মন্ত্রিপরিষদসচিব, ফৌজদারি কার্যবিধি প্রভৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে যাবেন। আপনার পছন্দ পুলিশ ক্যাডার হলে—পুলিশের বিভিন্ন পদের র্যাংক ব্যাজ, সহকারী পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পুলিশ সুপার, ডিআইজির দায়িত্ব ও ক্ষমতা, বাংলাদেশের বর্তমান ও সাবেক আইজিপির নাম, পুলিশ পদক, সারদা ও অন্যান্য পুলিশ ট্রেনিং একাডেমি, মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা, পুলিশের বিভিন্ন ব্রাঞ্চ, পুলিশ আইন ১৮৬১, পিআরবি, দণ্ডবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি, দেওয়ানি কার্যবিধি প্রভৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে যাবেন। আপনার পছন্দ স্বাস্থ্য বা শিক্ষা ক্যাডার হলে ক্যাডারসংশ্লিষ্ট তথ্যগুলোর সঙ্গে আপনার বিষয়ভিত্তিক প্রফেশনাল জ্ঞানও যাচাই করা হবে।
♦ ৩. সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, সাম্প্রতিক তথ্য, বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি-সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষার গাইড বই বা অন্য যেকোনো রেফারেন্স বই থেকে পড়ে নেবেন। এর জন্য—
ক) সংবিধান সম্পর্কে বিশ্লেষণাত্মক জ্ঞান ভাইভার জন্য অপরিহার্য। এ ক্ষেত্রে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাদা রঙের মূল সংবিধান, আরিফ খানের সংবিধানের ব্যাখ্যামূলক বই, মো. আব্দুল হালিমের সংবিধানসংক্রান্ত বইগুলো দেখতে পারেন।
খ) বাংলাদেশ সরকারের একজন ভাবি কর্মকর্তা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আপনার পরিষ্কার জ্ঞান থাকতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তথ্যগুলো যেমন—বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ছয় দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, উনসত্তরের গণ-আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন, অপারেশন সার্চলাইট, স্বাধীনতার ঘোষণা, মুজিবনগর সরকার, অপারেশন জ্যাকপট, মুক্তিযোদ্ধাদের খেতাব, সেক্টর ও সেক্টর কমান্ডার, বীরাঙ্গনা, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড, আত্মসমর্পণ চুক্তি, জাতীয় চার নেতা সম্পর্কে বিস্তারিত (নাম, জেলা, অবদান, জন্ম-মৃত্যু সাল, সন্তানদের নাম, সন্তানদের কর্মজীবন) জেনে যাবেন। অ্যান্থনি মাসকারেনহাসের ‘দ্য রেইপ অব বাংলাদেশ’, ‘লিগ্যাসি অব ব্লাড’, এম আর আক্তার মুকুলের ‘আমি বিজয় দেখেছি’, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট, সংবাদপত্রের বিভিন্ন আর্টিকল থেকে তথ্য নোট করে নেবেন। বাস্তব ধারণা নিতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে যেতে পারেন।
গ) বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর জীবন ও সংগ্রাম, স্বাধীনতাসংগ্রামে তাঁর অবদান সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখতে হবে। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড, হত্যাকারীদের সম্পর্কে বিস্তারিত, হত্যাকাণ্ডের বিচার, ফাঁসি ও পলাতক আসামিদের অবস্থান সম্পর্কেও বিস্তারিত জেনে যাবেন। এ ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর লিখিত বই ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা’, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’, আওয়ামী লীগের ওয়েবসাইট, উইকিপিডিয়া, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সংবাদপত্রের বিভিন্ন আর্টিকল—তথ্যসূত্র হতে পারে। ৭ই মার্চের ভাষণ, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনসংক্রান্ত ভিডিওগুলো অনলাইন থেকে দেখে নিতে পারেন। এ ছাড়া ধানমণ্ডির বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ পরিদর্শনের বাস্তব জ্ঞান আপনার পঠিত জ্ঞানকে আরো সমৃদ্ধ করবে।
ঘ) মুক্তিযুদ্ধ ছাড়াও বাংলায় মৌর্য-পাল-সেন-মুসলিম-সুলতানি-মোগল শাসন, ব্রিটিশ শাসন, পাকিস্তান রাষ্ট্রের ইতিহাসসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন ও যুদ্ধ, যেমন—পানিপথের যুদ্ধ, পলাশীর যুদ্ধ, সিপাহি বিদ্রোহ, বঙ্গভঙ্গ, বঙ্গভঙ্গ রদ, নীল বিদ্রোহ, ফরায়েজি আন্দোলন, লাহোর প্রস্তাব, দ্বিজাতিতত্ত্ব, দেশ ভাগের ঘটনা ও এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পর্কে জানতে হবে।
ঙ) বর্তমান সরকারের উন্নয়নসংক্রান্ত তথ্য (যেমন—মেগা দশ প্রজেক্ট ও বিশেষ উদ্যোগগুলো), ভিশন-২০২১, ভিশন-২০৪১, সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ও সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যুর বিস্তারিত তথ্য (যেমন—ডেঙ্গু), এমনকি ভাইভার দিনে বাংলা/ইংরেজি/আরবি তারিখ ও সাল, ভাইভার দিনে গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকার শিরোনাম ইত্যাদি থেকেও প্রশ্ন হতে পারে। এর জন্য ভাইভার সময়গুলোতে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সংবাদ, দৈনিক সংবাদপত্র ও আওয়ামী লীগের ওয়েবসাইটে নিয়মিত চোখ রাখতে হবে।
চ) আপনি নারী পরীক্ষার্থী হলে নারী উন্নয়নসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য জানতে হবে। নারীর ক্ষমতায়ন, CEDAW সনদ, সংবিধানে নারীসংক্রান্ত অনুচ্ছেদ, মন্ত্রিপরিষদে নারী, প্রশাসনে নারী ইত্যাদি সম্পর্কে নোট রাখবেন।
ছ) বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও সীমানা, জাতীয় পতাকা, জাতীয় প্রতীক ও জাতীয় সংগীত, বিভিন্ন উপজাতি ও প্রাচীন জনপদ, সচিবালয়, মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, বিভাগ, জেলা, উপজেলা, থানা, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, স্পিকার, সংসদ উপনেতা, চিফ হুইপ, প্রধান বিচারপতি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, মন্ত্রিপরিষদসচিব, তিন বাহিনীর প্রধান, আইজিপি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রী-সচিব, পিএসসির চেয়ারম্যান-সদস্যসচিব, এনবিআর চেয়ারম্যান, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক) সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্যসূত্র থেকে জেনে নেবেন।
জ) প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্র-ইরান দ্বন্দ্ব্ব, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, কাশ্মীর সংকট, এমডিজি ও এসডিজি (সময়কাল, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, বাংলাদেশের সফলতা ইত্যাদি), রোহিঙ্গা ইস্যু, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্ক, বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক, বিশ্বকাপ ক্রিকেট-২০১৯ ইত্যাদি থেকেও প্রশ্ন হতে পারে।
দরকারি কিছু টিপস
১. ভাইভা বোর্ডে ঢোকার আগে এক গ্লাস পানি খেয়ে জোরে নিঃশ্বাস নেবেন, এতে নার্ভাসনেস অনেকটাই কেটে যাবে।
২. অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করবেন, নিকটতম দূরত্বে গিয়ে সালাম বা আদাব দেবেন।
৩. বসতে না বললে বসবেন না। অনেকক্ষণ হয়ে গেলে বা না বসতে বলেই ভাইভা শুরু করলে ‘আমি কি বসতে পারি স্যার’ বলে অনুমতি নিয়ে নেবেন, এরপর অবশ্যই ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন।
৪. চেয়ারে হাতল থাকলে (সাধারণত থাকে না) হাতলে হাত রাখবেন না, পা নাচানো বা হাতের মুদ্রাদোষ থাকলেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করবেন। সবচেয়ে ভালো হয় দুই হাতের আঙুলগুলো ক্রস করে, ঊরুর ওপর হাত রাখা।
৫. বাংলায় প্রশ্ন করলে ইংরেজিতে উত্তর দেওয়া আপনার অতিরিক্ত পরিপক্বতা, আবার ইংরেজিতে প্রশ্ন করলে বাংলায় উত্তর দেওয়া আপনার অদক্ষতা। তাই যে মিডিয়ামে প্রশ্ন করা হবে, সে মিডিয়ামেই উত্তর দিন।
৬. ভাইভা বোর্ডে আরগুমেন্ট করবেন না। ভাইভা বোর্ড ‘সর্বজান্তা’ চায় না, চায় ‘বিনয়ী মার্জিত’ অফিসার। কোনো প্রশ্নের উত্তর ‘আপনারটা সঠিক, বোর্ডেরটা ভুল’ হলেও প্রমাণ করতে যাবেন না। বিনীতভাবে বলবেন, ‘আমি এমনটাই জানি, স্যার। তবে আমার জানায় ভুল হতে পারে।’
৭. ভাইভা বোর্ডে একজনের উত্তর দেওয়ার সময় বোর্ডের অন্য কেউ প্রশ্ন করলে ‘আমি কি স্যারের উত্তর শেষ করে আপনার উত্তর দিতে পারি?’ বলে অনুমতি নিয়ে নেবেন।
৮. ভাইভা বোর্ডে রাজনৈতিক বা অন্য মতাদর্শকেন্দ্রিক প্রশ্ন হলে টেকনিক্যালি উত্তর দেবেন, যেন উত্তরটা এমনভাবে ধোঁয়াশা থাকে, যেন এটির মিনিং যেকোনো মতাদর্শকেন্দ্রিক হয়। বোর্ডকে খুশি করতে নিজেকে সরকারদলীয় বোঝাতে গেলে হিতে বিপরীতও হতে পারে।
৯. ভাইভায় আই কন্টাক্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বোর্ড মেম্বার প্রশ্ন করার সময় মনোযোগী শ্রোতার মতো শোনার চেষ্টা করুন। উত্তর দেওয়ার সময়ও আই কন্টাক্ট লক্ষ করবেন। গম্ভীর না থেকে হাসিমুখে থাকুন।
১০. ভাইভা বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখবেন। যেমন—প্রবেশের সময় ‘মে আই কাম ইন প্লিজ’ বললে বোর্ড ইংরেজি মিডিয়ামে প্রশ্ন করতে উত্সাহিত হয়। তাই বাংলা মিডিয়ামে ভাইভা দেওয়ার ইচ্ছা থাকলে ‘ভেতরে আসতে পারি স্যার’ বলে ভাইভা মিডিয়াম নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন (সাধারণ অর্থে, এর ব্যতিক্রমও হতে পারে)। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় তীক্ষভাবে উত্তরের শব্দগুলো নির্বাচন করবেন। কারণ এর উত্তর থেকেই পরের প্রশ্ন হতে পারে। সিটি ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি ভাইভায় আমাকে বলেছিল, Say about Sundarbans। আমি ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট বলায়ই পরের প্রশ্ন ছিল, ‘ডিফাইন ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট’। আপনি যে টপিকগুলো ভালো পারেন বোর্ডকে টেকনিক্যালি সেদিকে ধাবিত করতে উত্তরে প্রাসঙ্গিক হলে আপনার জানা টপিকের ওয়ার্ডগুলো ঢুকিয়ে দিন। ওই ওয়ার্ডকে ধরেই পরের প্রশ্ন হতে পারে।
১১. চলে আসার সময় অবশ্যই ধন্যবাদ দিয়ে আসবেন। চেয়ার থেকে উঠে দুই-তিন স্টেপ পিছিয়ে টার্ন নেবেন। পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবেন না। বের হওয়ার সময় দরজা ঠাস করে বন্ধ করবেন না, ওই সময়েই কিন্তু আপনার মার্ক লেখা হচ্ছে।
১২. আপনি প্রিলি রিটেন উত্তীর্ণ হয়েই ভাইভা বোর্ডে এসেছেন, তাই নতুন করে আপনার মেধা যাচাইয়ের আবশ্যকতা নেই বোর্ডের কাছে। আপনার ভেতর অফিসারসুলভ আচরণ আছে কি না, আপনাকে ঘষেমেজে অফিসার বানানো যাবে কি না, এটাই ভাইভা বোর্ড লক্ষ করবে। সব প্রশ্নের উত্তর আপনার জানা থাকার কথা নয়, আপনি একটা প্রশ্নের উত্তর না পারলে, এটা যে পারেন না, এ কথাটা যত সুন্দরভাবে গুছিয়ে বলতে পারেন, এটাই আপনার দক্ষতা।
১৩. ওপরের কোনো কৌশলের কোনো কিছুই হয়তো ভাইভা বোর্ডের মনে থাকবে না। এটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। ভাইভা বোর্ডে জাস্ট উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন। ভাইভা বোর্ডে একেবারে নার্ভাস হবেন না। নার্ভাস হলেই যে পাস করবেন, নার্ভাস না থেকে খোশ মেজাজে থাকলে আপনার জব হবে না, এমনটা তো নয়। সব প্রশ্নের উত্তর পারলেই ক্যাডার হবেন, না পারলে হবেন না, এটিও নয়।
ড্রেস কোড
আপনাকে যে ড্রেস পরলে ফরমাল বা মার্জিত লাগে সেটাই পরবেন।
♦ ছেলেদের জন্য
১. ছেলেরা যেকোনো ফুলহাতা শার্ট পরতে পারেন হালকা রঙের, তবে সাদা হলে ভালো হয়। শার্টের নিচে ঘাম প্রতিরোধ ও গায়ের শেইপ যেন না দেখা যায় সে জন্য হাফ বা ফুলহাতা গেঞ্জি পরে নিতে পারেন।
২. প্যান্ট গাঢ় যেকোনো রং হতে পারে, তবে কালো রং ভালো হবে। বেল্ট কালো নরমাল হতে হবে, লেদার হলে ভালো, বেল্টে বকলেস না হয়ে আগের সময়ের ওল্ড স্টাইলের কাটা থাকলে ভালো।
৩. মোজা অবশ্যই কালো এবং লং হতে হবে, ভুলেও প্রাইভেট জব স্টাইলের শর্ট শকস পরবেন না। ভালো ব্র্যান্ডের হলে দুর্গন্ধ হওয়ার কোনো ঝামেলা পোহাতে হবে না। মোজা ব্যবহারের আগে তাতে কিছু ট্যালকম পাউডার দিয়ে নেবেন ঘাম ও দুর্গন্ধ প্রতিরোধের জন্য।
৪. কালো রঙের শু পরবেন, বাটার ফিতা শু, যেটা পিএটিসিতে ট্রেনিংয়ের সময় দেওয়া হয় (অক্সফোর্ড শু), সেটা হলে ভালো হয়। শুর সোল রাবারের হওয়া বাঞ্ছনীয়, তাহলে ঠক ঠক শব্দ হবে না।
৫. টাই পরার বাধ্যবাধকতা নেই। পরলে সাদা শার্টের সঙ্গে মেরুন অথবা নেভি ব্লু টাই পরবেন। সরকারি অফিশিয়াল রুলস অনুযায়ী অক্টোবর থেকে মার্চ শীতকালীন ধরে স্যুট ব্যবহার করতে বলা হয়, অন্য সময় বাদ। তবে যাঁদের স্যুট পরলে একটা গর্জিয়াস লুক আসে, তাঁরা অন্য সময়ও স্যুট পরতে পারেন।
৬. ভাইভায় মার্জিত দেখে হাতঘড়ি পরা উচিত। যেহেতু পিএসসিতে প্রবেশের সময় মোবাইল জমা রাখা হয়, হাতঘড়ি আপনার সময় সম্পর্কে ধারণা দেবে। সবচেয়ে বড় কথা হাতঘড়ি অফিসারসুলভ লুক এনে দেয় এবং এতে বোর্ড আপনাকে সময় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে আপনাকে বিব্রত হতে হবে না।
৭. ভাইভা দেওয়ার দুই সপ্তাহ আগে চুল কাটাবেন, যেন ভাইভায় আসতে আসতে চুল মাঝারি শেইপে আসে। ভাইভার আগের রাতে শেইভ করবেন, ভুলেও ভাইভার দিন সকালে করবেন না, দেখতে বাজে লাগবে।
♦ মেয়েদের জন্য
১. হালকা রঙের সুতি শাড়ি পরবেন, কলার ব্লাউজ এবং হাতা কোয়ার্টার বা লং হতে হবে।
২. হালকা প্রসাধন থাকতে পারে। অলংকার থাকলে একেবারে নরমাল।
৩. স্যান্ডেল অবশ্যই পাতলা স্লিপার হতে হবে। হাঁটার সময় যেন শব্দ না হয় সেটা খেয়াল রাখবেন অবশ্যই।
# কৃতজ্ঞতা : চাকরি আছে, কালের কণ্ঠ, কার্টুন : প্রসূন হালদার