ব্যারিস্টার হওয়ার স্বপ্ন থাকে অনেকেরই। কিভাবে পূরণ করবেন এ স্বপ্ন? কোথায় পড়বেন, খরচ কেমন? বিস্তারিত জানাচ্ছেন আরাফাত শাহরিয়ার
ব্যারিস্টার অ্যাট ল-র সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে বার অ্যাট ল। যারা আইন পেশায় নিয়োজিত হতে চান, তাঁদের জন্য ইংল্যান্ড বার কাউন্সিলের একটি সম্মানজনক সনদ হচ্ছে বার অ্যাট ল। ব্যারিস্টার তাহমিনা পলি জানান, একজন ব্যারিস্টার হিসেবে স্বীকৃত হওয়ার জন্য ৯ মাসের একটি বার ভোকেশনাল কোর্স (বিভিসি) করতে হয়, যার বর্তমান নাম বার প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্স (বিপিটিসি)। এ সময় ১২টি নৈশভোজে অংশ নিতে হয়। এই কোর্স সফলভাবে শেষ করার পর মেলে ইংল্যান্ড বার কাউন্সিলের স্বীকৃতি।
কাদের জন্য
আমাদের দেশে আইন পেশায় আসতে চাইলে যেমন আইন বিষয়ে ডিগ্রি নিতে হয়, তেমনি রীতি অনুযায়ী ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে আইন ব্যবসার অনুমতিপত্র হচ্ছে বার অ্যাট ল। ব্যারিস্টাররা কমনওয়েলথভুক্ত যেকোনো দেশে আইন ব্যবসা করতে পারেন, যদিও এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের বার কাউন্সিলের অনুমতির প্রয়োজন হয়।
বার প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্সের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এ কোর্স করার ক্ষেত্রে বয়সের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকলে যে কেউ যেকোনো বয়সে এ কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন।
ব্যারিস্টারি পড়ার আগে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ানো হয়। প্রথমেই বলে নেওয়া দরকার, এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের ওপর অনার্স ও মাস্টার্স করেও কেউ সরাসরি ইংল্যান্ডে প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন না। অর্থাৎ ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় এবং তাদের অধিভুক্ত কিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেউ যদি অনার্স পাস করে (সে যে বিষয়েই হোক) তবে তাকে বার প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্সে ভর্তি হতে হলে আবার নতুন করে কোনো ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় বা স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে এলএলবি বা এলএলএম পাস করতে হবে।
দেশে বসেই ইংল্যান্ডের ডিগ্রি
ব্যারিস্টার তাহমিনা পলি জানান, আমাদের দেশে ভূঁইয়া একাডেমী, নিউ ক্যাসেল ল একাডেমী, ব্রিটিশ স্কুল অব ল, লন্ডন কলেজ অব লিগ্যাল স্টাডিজ-এই চারটি টিউশন সার্ভিস প্রোভাইডার বার অ্যাট ল পড়ালেখার বিষয়ে সহযোগিতা করে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠান ভর্তি, টিউশন ফি জমাসহ প্রয়োজনীয় সব বিষয়ে সহযোগিতা করে।
ভুঁইয়া একাডেমীর সিনিয়র প্রশাসনিক কর্মকর্তা খালেদ-উজ-জামান খান জানান, এইচএসসি বা সমমানের ডিগ্রিধারী যে কেউ ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় স্বীকৃত তিন-চার বছর মেয়াদি এলএলবি অনার্স কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসি মিলে জিপিও-৫ থাকতে হবে। ভর্তির ক্ষেত্রে কোনো বয়সসীমা নেই। শিক্ষার্থীরা ইংল্যান্ডের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে ও একই সময়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে থাকেন। পরীক্ষা নেওয়া হয় ব্রিটিশ কাউন্সিলের মাধ্যমে। ইংল্যান্ডেই এসব উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয়। এভাবে দেশে বসেই ইংল্যান্ডের ডিগ্রি পেতে পারেন। এলএলবি করার পর ইংল্যান্ডে সরাসরি বার ভোকেশনাল কোর্সে ভর্তি হওয়া যাবে। এলএলবি কোর্স ইংল্যান্ডেও করতে পারেন।
কী যোগ্যতা লাগে
ব্যারিস্টার মো. রিয়াজ উদ্দিন জানান, বার প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্সে ভর্তির আবেদনের জন্য কোনো ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় বা তার অধিভুক্ত কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে দ্বিতীয় শ্রেণীর এলএলবি (সম্মান) ডিগ্রি থাকতে হবে। আর ইংল্যান্ডের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য কোনো বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি থাকলে তাঁকে এক বছরের সিপিই কোর্স করার পর বার প্রফেশনাল কোর্সের জন্য আবেদন করা যাবে।
তিনি আরো জানান, এ কোর্সে প্রতিবছরই পাঁচ হাজারের মতো আবেদন জমা পড়ে। শিক্ষাগত যোগ্যতা, ব্যক্তিগত দক্ষতা, ভাষার দখল, সাংগঠনিক দক্ষতা-এসব বিষয় বিবেচনায় এনে আবেদনকারীদের মধ্য থেকে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করা হয়। সম্প্রতি আইইএলটিএস স্কোরও দেখা হচ্ছে। আবেদনের ক্ষেত্রে স্কোর ৭.৫ বাধ্যতামূলক হলেও অনেক ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়।
কোথায় পড়বেন
বার অ্যাট ল কোর্সটি ইংল্যান্ডের চারটি ইন’স-এর যেকোনো একটি থেকে করতে হয়। অর্থাৎ লিনকনস ইন, গ্রেইস ইন, ইনার টেম্পল ও মিডল টেম্পল-এই চারটি ইন’স-এর মধ্যে যেকোনো একটি আপনাকে বেছে নিতে হবে।
সনদ ইন থেকে দেওয়া হলেও কোনো একটি ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পড়াশোনা করতে হয়। ইন’স অব কোর্ট, স্কুল অব ল, কলেজ অব ল, বিপিপি ল স্কুল, নটিংহ্যাম, নর্দামব্রিয়া, ব্রিস্টল, কার্ডিফ, ম্যানচেস্টার মেট্রোপলিটন-এই ৯টি প্রতিষ্ঠানে বার অ্যাট ল করা যায়। এর যেকোনো একটিতে পড়তে পারেন। সাধারণত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বার অ্যাট ল কোর্সে ভর্তি করা হয়। এ কোর্সে অ্যাডভোকেসি, ক্লায়েন্ট কনফারেন্সিং, নেগোসিয়েশনসহ ১৩টি বিষয়ের ওপর পরীক্ষা দিতে হয় এবং সব বিষয়েই আলাদাভাবে পাস করতে হয়।
খরচাপাতি
ব্যারিস্টারি পড়া বেশ ব্যয়বহুল। প্রতিবছরই এ খরচ বাড়ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভেদে টিউশন ফি কিছুটা কম-বেশি হয়ে থাকে। ব্যারিস্টার মো. রিয়াজ উদ্দিন জানান, বার ভোকেশনাল কোর্সের টিউশন ফি প্রতি বছর বাড়ছে। প্রতিষ্ঠানভেদে এ কোর্সের খরচ হবে প্রায় ২৫ লাখ টাকা। আর ইংল্যান্ডে গিয়ে যদি অনার্স করতে হয়, তবে লাগবে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা। দেশে অনার্স করলে অবশ্য খরচ কিছুটা কমবে।
তিনি আরো জানান, বার অ্যাট ল কোর্সটির মেয়াদ ৯ মাস হলেও এটি শেষ করতে এক বছর লেগে যায়। তাই এর টিউশন ফির সঙ্গে এক বছরের থাকা-খাওয়ার খরচ হিসাব করতে হবে। এ খরচ নির্ভর করে জীবনযাত্রার ওপর। এই এক বছরে থাকা-খাওয়া বাবদ আট থেকে দশ লাখ টাকা গুনতে হবে।
খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ
ইংল্যান্ডে যাঁরা ব্যারিস্টারি পড়তে যান, পড়াশোনার পাশাপাশি তাঁদের খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ রয়েছে। দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্রছাত্রীরা নতুন নিয়মে সপ্তাহে ১০ ঘণ্টা কাজ করতে পারেন। যদিও এ সময় পড়ার চাপে খণ্ডকালীন কাজ করা যায় না-জানালেন ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান। তিনি জানান, বার অ্যাট ল করার সময় প্রচুর পড়াশোনা করতে হয়। তাই সুযোগ থাকলেও খণ্ডকালীন কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
বিশেষ পরামর্শ
বার প্রফেশনাল কোর্সের জন্য অবশ্যই ইংল্যান্ড যেতে হবে
ব্যারিস্টার ফজলে এলাহী রেজা
আইনজীবী
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টব্যারিস্টার হওয়ার জন্য ৯ মাসের একটি বার প্রফেশনাল কোর্স করতে হয় ইংল্যান্ড থেকে। কোর্স শেষে পাওয়া যায় ইংল্যান্ড বার কাউন্সিল সনদ। বার প্রফেশনাল কোর্সে ভর্তি হতে চাইলে ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় বা অধিভুক্ত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমপক্ষে দ্বিতীয় শ্রেণীর এলএলবি সম্মান পাস করতে হবে। আমাদের দেশে ব্রিটিশ স্কুল অব ল, ভূঁইয়া একাডেমী, নিউ ক্যাসেল ল একাডেমীসহ কিছু প্রতিষ্ঠানে এ কোর্স করা যায়। এইচএসসি পাসের পর এসব প্রতিষ্ঠানে তিন-চার বছরমেয়াদি এলএলবি কোর্স করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসি মিলে জিপিএ ৫ থাকতে হবে। বার প্রফেশনাল কোর্স করার জন্য অবশ্যই ইংল্যান্ড যেতে হবে। কোর্সটি করতে হবে ইংল্যান্ডের চারটি ইনসের (লিনকনস ইন, গ্রেইস ইন, ইনার টেম্পল ও মিডল টেম্পল) যেকোনো একটি থেকে। সনদ ইন থেকে দেওয়া হলেও পড়াশোনাটা কোনো একটি ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে করতে হবে।