চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্সি বা সিএ পড়তে চান অনেকেই। এ ডিগ্রির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। একটু পরিশ্রমী হলেই এ ডিগ্রি নেওয়া সম্ভব। বিস্তারিত জানাচ্ছেন পিন্টু রঞ্জন অর্ক
চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্সি বা সিএ পড়তে চান অনেকেই। এ ডিগ্রির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। একটু পরিশ্রমী হলেই এ ডিগ্রি নেওয়া সম্ভব। বিস্তারিত জানাচ্ছেন চাকরিবাকরির কথা মাথায় রেখেই শিক্ষার্থীরা এখন পড়ার বিষয় নির্বাচন করছেন। জানতে চাইছেন একটা বিষয়ের পুরোটা। যেমন-হিসাবরক্ষণ যদি বিষয় হয়, তবে অফিস ব্যবস্থাপনা, বাজারের চরিত্র, আমদানি-রপ্তানি ও নীতিমালা জানারও প্রয়োজন পড়ছে। এ ক্ষেত্রে চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্সি অনেকটাই সর্বাঙ্গীন পড়াশোনা কাঠামো।
কেন করবেন, কোথায় করবেন
প্রতিটি বড় প্রতিষ্ঠানেই হিসাব বিবরণী সুষ্ঠু রাখতে চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট নিয়োগ দেওয়া হয়। দেশে ও বিদেশে নামকরা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টদের। ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস অব বাংলাদেশের সাবেক সেক্রেটারি এন আই চৌধুরী এফসিএ বলেন, ‘পৃথিবীর সব স্থানেই পেশা হিসেবে সিএকে প্রথম সারিতে রাখা হয়। মুক্তবাজার অর্থনীতির যুগে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও লেনদেনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হিসাব-নিকাশের জটিলতা। যে কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোতে দক্ষ, অভিজ্ঞ ও ভালো মানের চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ ছাড়া সম্মান ও আর্থিক সক্ষমতা অন্য যেকোনো পেশার চেয়ে এতে অনেক বেশি।’
আইসিএবি অনুমোদিত একটি ফার্ম হলো মণ্ডল অ্যান্ড কোং। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক গৌরাঙ্গ চন্দ্র মণ্ডল জানান, দেশে আইসিএবি অনুমোদিত মোট ১৬৮টি ফার্ম আছে। যেগুলোতে সিএ পড়ানো হয়। এ ছাড়া বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই রয়েছে সিএ পড়ার সুযোগ।
ভর্তির প্রক্রিয়া ও যোগ্যতা
সরকারি কিংবা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেকোনো ডিসিপ্লিনে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করা যে কেউ ভর্তি হতে পারবেন সিএ কোর্সে। তবে এ ক্ষেত্রে নূন্যতম ৭ পয়েন্ট থাকতে হবে। যাঁদের গ্রাজুয়েশন হয়নি, শুধু এইচএসসি কিংবা ‘ও’ লেভেল, ‘এ’ লেভেল পাস করেছেন তাঁরাও পড়তে পারবেন সিএ। এ ক্ষেত্রে যোগ্যতা হিসেবে যাঁরা এইচএসসি পাস করেছেন তাঁদের মধ্যে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় যেকোনো একটিতে জিপিএ ৫ এবং অন্যটিতে জিপিএ ৪ থাকতে হবে।
সিএ কোর্সে বয়সের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই-জানালেন এন আই চৌধুরী। ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি জানান, আইসিএবি অনুমোদিত যেকোনো হিসাবরক্ষণ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ভর্তি ফরম সংগ্রহ করতে হয়। কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রার্থীকে ভর্তির জন্য প্রাথমিকভাবে মনোনীত করা হয়। মনোনীত প্রার্থীকে কোর্স ফি হিসেবে ২৫ হাজার টাকার পে-অর্ডার জমা দিতে হয়।
প্রার্থীর যাচাইকৃত কাগজপত্র, পে-অর্ডার এবং একটি চুক্তিপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঢাকার কারওয়ান বাজার আইসিএবির অফিসে পাঠালে সেখান থেকে প্রার্থীকে একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বর সংবলিত আইডি কার্ড দেওয়া হয়। আইসিএবির আইডি কার্ড হাতে পেলেই শেষ হয় ভর্তি প্রক্রিয়া।
আর্টিক্যালশিপের সময়
সিএ পড়ার ক্ষেত্রে আর্টিক্যালশিপ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাপারটি অনেকটা প্রশিক্ষণের মতোই। এ আর্টিক্যালশিপ করতে হয় আইসিএবি অনুমোদিত যেকোনো হিসাবরক্ষণ প্রতিষ্ঠানে। সহজভাবে বলতে গেলে, এ সময় সিএ ছাত্রকে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থেকে কাজ করতে হয়। গ্রাজুয়েশন করা ছাত্রছাত্রীদের জন্য আর্টিক্যালশিপের মেয়াদ তিন বছর। যারা গ্রাজুয়েশন করেননি; কিন্তু এইচএসসি বা ‘ও’ লেভেল এবং ‘এ’ লেভেল শেষ করা ছাত্রছাত্রীদের জন্য আর্টিক্যালশিপের মেয়াদ চার বছর। তবে ‘এ’ লেভেলে ৩টি ‘এ’ থাকলে এ মেয়াদ সাড়ে তিন বছর।
আর্টিক্যালশিপ করার সময় শিক্ষার্থীদের ভাতা দেওয়া হয়ে থাকে। প্রথম বর্ষে প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা, দ্বিতীয় বর্ষে দুই হাজার ৫০০ টাকা, তৃতীয় বর্ষে তিন হাজার এবং চতুর্থ বর্ষে সাড়ে তিন হাজার টাকা হারে ভাতা পেয়ে থাকেন শিক্ষার্থীরা।
দুটি ধাপে চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট
চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট হওয়ার জন্য দুই ধাপের পরীক্ষায় পাস করতে হবে। ধাপ দুটি হলো প্রফেশনাল স্টেজ ও অ্যাডভান্স স্টেজ। প্রফেশনাল স্টেজে আবার নলেজ লেভেল ও অ্যাপি্লকেশন লেভেল নামের দুটি ভাগ আছে। যেখানে সাতটি করে ১৪টি পেপারের ওপর মোট ১৪০০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হয়। এ ধাপটি শেষ করতে কমপক্ষে এক বছর সময় লাগে। এর পরের ধাপটি হলো অ্যাডভান্স স্টেজ। এ ধাপে তিনটি পেপার এবং একটি কেস স্টাডি থাকে। যেখানে মোট ৪০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হয়। এখানে শিক্ষার্থীদের আইএসবি অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে দু-তিন বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। এ অভিজ্ঞতা অর্জনের পর একটি কেস স্টাডি জমা দিতে হয়। এ ধাপ পেরোতে পারলেই সিএ কোর্স শেষ হবে। পরীক্ষাগুলোতে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন থেকে শুরু করে সবকিছু সমন্বয় ও তদারকির দায়িত্বে থাকে আইসিএবি। বাংলাদেশে একমাত্র আইসিএবিই চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টের স্বীকৃতিস্বরূপ শিক্ষার্থীকে চূড়ান্ত সনদ দিয়ে থাকে।
যে বিষয়গুলো পড়ানো হয়
প্রফেশনাল স্টেজে একজন শিক্ষার্থীকে মোট ১৪টি বিষয় পড়তে হয়। এর মধ্যে নলেজ লেভেলে অ্যাসিউরেন্স অ্যাকাউনট্যান্টিং, বিজনেস অ্যান্ড ফিন্যান্স, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন, ট্যাক্সেশন-১, বিজনেস অ্যান্ড কমার্শিয়াল ল’, আইটি নলেজ এবং অ্যাপি্লকেশন লেভেলে অডিট অ্যান্ড অ্যাসিউরেন্স ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউনট্যান্টিং, বিজনেস স্টাটেজি, ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট, ট্যাক্সেশন-২, করপোরেট ল’ অ্যান্ড প্
প্যাকটিস ও আইটি অ্যাপ্লিকেশন শিরোনামের বিষয়গুলো পড়তে হয়। ফিন্যান্সিয়াল অ্যান্ড করপোরেট রিপোর্টিং, অ্যাডভান্স অডিট অ্যান্ড অ্যাসিউরেন্স, বিজনেস অ্যানালাইসিস-এ তিনটি বিষয়ে পড়তে হয় অ্যাডভান্স স্টেজে।
সব মিলিয়ে মোট ১৮০০ নম্বরের কোর্স। এসব কোর্সে পাস করার পরই মেলে চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট হিসেবে আইসিএবির স্বীকৃতি।
খরচ কেমন
নলেজ লেভেলে ভর্তি হতে লাগে ২৫ হাজার টাকা। কোচিং ফির জন্য দিতে হয় ১৫ হাজার টাকা। অ্যাডভান্স স্টেজে কেস স্টাডির জন্যও আলাদা খরচ লাগবে। এ ছাড়া পরীক্ষা ফি বাবদ প্রতিটি বিষয়ের ক্ষেত্রে নলেজ লেভেলে এক হাজার টাকা, অ্যাপি্লকেশন লেভেলে দুই হাজার টাকা এবং অ্যাডভান্স লেভেলে তিন হাজার টাকা করে জমা দিতে হয়।
আয়-রোজগার
আমাদের দেশে এমনকি সারা বিশ্বেই সিএ ডিগ্রিধারীদের চাহিদা রয়েছে। চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট হিসেবে পাস করে বের হওয়ার পর ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হয় না। আইসিএবি থেকে পাশ করা শিক্ষার্থী ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস অব ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলসের সদস্য হতে পারেন প্রতিষ্ঠানটির ফাইনাল স্টেজের দুটি পরীক্ষা ও কেস স্টাডি জমা দিয়েই। আইসিএবির সেক্রেটারি এন আই চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমানে দেশে ১০ হাজারের মতো চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু দেশে সিএ ডিগ্রিধারী সব মিলিয়ে প্রায় এক হাজার ২০০।’
যোগাযাগ
ভর্তির নিয়ম, প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও খরচের বিষয়টি মাঝেমধ্যে পরিবর্তন করা হয়। এ বিষয়ে সরাসরি সিএ ভবনে যোগাযোগ করলে আপডেট সব তথ্য পাবেন। ঠিকানা :
চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট (সিএ ভবন)
১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫
ফোন : ৯১১৭৫২১, ৯১১৫৩৪০
ওয়েব : www.icab.org.bd
চট্টগ্রাম অফিস : হাউস ফাইন্যান্স করপোরেট বিল্ডিং (তৃতীয় তলা), ১/বি আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম।