প্রচ্ছদ > শিক্ষা > ফিচার > মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা: দেশসেরা ছাত্রীর পরামর্শ
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা: দেশসেরা ছাত্রীর পরামর্শ

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা: দেশসেরা ছাত্রীর পরামর্শ

২৪ অক্টোবর বসছে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ ভর্তি পরীক্ষার আসর। প্রস্তুতির নানা বিষয় ও ভালো করার কৌশল শেখ ফায়সালকে জানিয়েছেন ২০১৩ সালের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধাতালিকায় প্রথম আনিকা তাহসিন

Medical admission test First Anika Tahsinসামনেই ভর্তির মহারণ। তোমার সাফল্যের সম্ভাবনা তখনই, যখন তুমি মনে করবে ‘আমি পারবই’। হবে না, পারব না- এ ধরনের কথাবার্তা ভুলে যাও। হারার আগেই হেরে যাওয়ার দুশ্চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। সামনে যে সময় আছে, সেটা কাজে লাগাও। আত্মবিশ্বাস আর যথাযথ প্রস্তুতিই তোমার চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পারে এবং সেটা হতে পারে প্রথমবারেই।

জানো নিশ্চয়ই?
পরীক্ষার ধরন, মানবণ্টন তোমাদের জানা। তবুও একটু জানিয়ে দিই। ২০০ নম্বরের মধ্যে ১০০ নম্বর আর তোমার হাতে নেই। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলের সঙ্গে সঙ্গে তা নির্ধারিত হয়ে গেছে। অর্থাৎ ফরম পূরণ করেছ মানেই তুমি অর্ধেক পরীক্ষা দিয়ে ফেলেছ। আশা করছি, তোমার প্রাপ্ত নম্বর বাকি লড়াই করার জন্য যথেষ্ট। বাকি যে ১০০ নম্বর রইল, সেটা যাচাই হবে এমসিকিউ পরীক্ষায়। ১০০ নম্বরের জন্য ১০০টি এমসিকিউ প্রশ্ন থাকবে। এর মধ্যে জীববিজ্ঞান (প্রাণিবিজ্ঞান ও উদ্ভিদবিজ্ঞান) থেকে থাকে ৩০ নম্বর, রসায়ন প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রে ২৫, পদার্থবিজ্ঞান প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রে ২০, ইংরেজি ১৫ ও সাধারণ জ্ঞানে থাকবে ১০ নম্বর। নম্বর বণ্টন দেখে বোঝা যাচ্ছে, জীববিজ্ঞান এবং এর পরে রসায়নের গুরুত্ব বেশি। জানো নিশ্চয়ই, একটি ভুলের জন্য ০.২৫ নম্বর করে কাটা যাবে। অর্থাৎ ৪টি ভুল উত্তরের জন্য তুমি হারাচ্ছ ১টি সঠিক উত্তরের নম্বর।

জীববিজ্ঞান
প্রাণিবিজ্ঞান থেকেই সাধারণত বেশির ভাগ প্রশ্ন করা হয়। আর মানবদেহ অধ্যায় থেকে প্রশ্ন বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই মানবদেহের খুঁটিনাটি তথ্যগুলো ভালোভাবে ঝালিয়ে নাও, পরিষ্কার ধারণা রাখো প্রত্যেকটি তন্ত্র এবং প্রক্রিয়ার ওপর। উদ্ভিদ বিজ্ঞানের জন্য উদ্ভিদের ভিন্নতা, জৈবনিক প্রক্রিয়া- এই বিষয়গুলো থেকেও বিগত বছরগুলোতে প্রশ্ন বেশি আসতে দেখা গেছে।
কোন বিজ্ঞানী কোন মতবাদের জন্য বিখ্যাত, কোন সূত্রটি কত সালে আবিষ্কার করা হয়েছে- এসব তথ্য ঠোঁটস্থ থাকতে হবে। সংজ্ঞা, বইয়ের সব ছক, বৈশিষ্ট্য, পার্থক্য- এই অংশ থেকে প্রশ্ন আসে বেশি।

রসায়ন
রসায়ন দ্বিতীয় পত্র থেকেও প্রশ্ন আসে বেশি। নামীয় বিক্রিয়া ও আবিষ্কার সাল খেয়াল রেখো। সবচেয়ে গুরুত্ব দাও মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম, ডি ব্লক মৌল, জৈব এসিড, হাইড্রোকার্বন, হ্যালোজেন ইত্যাদি বিষয়ে। এসব বিষয়ে প্রায় প্রতিবছর প্রশ্ন আসে। রাসায়নিক বন্ধন, তড়িৎ রাসায়নিক কোষ, অ্যালডিহাইড ইত্যাদি বিষয়েও বিশেষ নজর দাও।
যৌগের প্রস্তুত প্রণালি, বিভিন্ন পলিমার এবং এদের ব্যবহার থেকে প্রশ্ন আসে। রাসায়নিক বিক্রিয়া বা সংকেত মুখস্থ করার দরকার নেই। ভর্তি পরীক্ষায় বিক্রিয়া সরাসরি আসে না। ডেটা, সংখ্যাবাচক জটিল শব্দ ও তথ্য মনে রাখার জন্য নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে।

পদার্থবিজ্ঞান
পদার্থবিজ্ঞানে যেসব চেনাজানা ও সহজ সূত্রের ছোট অঙ্ক দেওয়া হয়। এ জাতীয় প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর দিতে পারলে তুমি এগিয়ে আসবে অনেককেই ডিঙিয়ে। পার্থক্য, একক মান ইত্যাদি যত ছক আছে, ভালোভাবে মনে রেখো। যা পড়বে, সঙ্গে সঙ্গে তার শর্ট নোট রাখবে। সংখ্যাসংবলিত চার্টগুলো ছাড়াও এককের ব্যাপারটা খেয়াল রাখবে। গুরুত্বসহকারে পড়বে পদার্থের বৈশিষ্ট্য, ব্যবহার ও পার্থক্য, একক মাত্রা নির্ভরশীলতা, প্রাকৃতিক ঘটনাবলির ব্যাখ্যা।

ইংরেজি
Vocabulary-তে যে যত ভালো, এই অংশে নম্বর ওঠানোর সুযোগও তার বেশি। তাহলে Synonym-Antonym নিয়ে তেমন বেগ পেতে হবে না। Right Form of Verb, Tense, Parts of speech থেকে প্রতিবছরই প্রশ্ন করা হয়। Narration, Voice, Phrase and Idioms, Preposition নিয়ে একটু বাড়তি মনোযোগ দাও। নিয়মিত চোখ রাখতে হবে ইংরেজি দৈনিকে, এটি কাজে দেবে।

সাধারণ জ্ঞান
দৈনিক পত্রিকা নিয়মিত পড়লে সাধারণ জ্ঞান নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাতে হবে না। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঘটে যাওয়া আলোচিত ঘটনাগুলো সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখার জন্য পত্রিকাগুলোতে প্রতিদিন চোখ বুলাও। এ ছাড়া ক্ষুদ্রতম, বৃহত্তম, প্রথম ও একমাত্র- এ ধরনের বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দাও। বিসিএস পরীক্ষার বিগত ২৫ বছরের প্রশ্ন সমাধান করলে প্রশ্ন কমন পেতে পারো।

প্রশ্ন হবে সব লেখকের বই থেকে
ভর্তি পরীক্ষায় একই বিষয়ে সাধারণত বিভিন্ন লেখকের বই থেকে প্রশ্ন করা হয়। এইচএসসিতে যারা একজন লেখকের বই পড়ে এসেছে, তাদের জন্য এই অল্প সময়ে অন্যান্য লেখকের বই পড়ে শেষ করা কঠিন কাজ। এ ক্ষেত্রে যা করতে পারো, এইচএসসিতে যে লেখকের বই পড়ে এসেছ তা ভালোভাবে রিভিশন দিয়ে অন্য লেখকের বইয়ে চোখ বুলিয়ে যাও। অন্য বইগুলোতে অতিরিক্ত যেসব তথ্য আছে, তা টুকে রাখতে পারো। মূল বই পড়ার সময় প্রতিটি অধ্যায়ের পাশে নোট রাখবে। এগুলো শেষ মুহূর্তে কাজে দেবে, রিভিশনের সময় ঝামেলা পোহাতে হবে না।
সাধারণ জ্ঞান অংশটি ছাড়া প্রায় সব প্রশ্নই করা হয় মূল বইকে ভিত্তি করে। বিগত কয়েক বছরের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন দেখলে কোন অধ্যায়ের কোন অংশ থেকে বেশি প্রশ্ন আসে, সে ব্যাপারে ধারণা পাওয়া যাবে।

কাজে দেবে মডেল টেস্ট
কখনোই পড়োনি এমন কিছু এই সময়ে নতুন করে পড়তে যেও না। তবে বিগত বছরগুলোতে বারবার এসেছে এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আয়ত্ত করে ফেলাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য নিজে নিজে পরীক্ষা দেবে। ঘরে বসে মডেল টেস্ট দিলে ধরা পড়বে নিজের দুর্বলতা।
যেহেতু সময়ের সংক্ষিপ্ততা এবং ভুল উত্তরের জন্য নম্বর হারানোর আশঙ্কা আছে, তাই কৌশলী হতে হবে পরীক্ষার হলে। প্রথম ২৫ মিনিটে নিশ্চিতভাবে জানা এবং সহজ ৫০-৬০টি উত্তর দাগিয়ে নিতে পারো এবং পরের ২০ মিনিটে মোটামুটি সহজ এ রকম ২০-৩০টি উত্তর দাগিয়ে ফেলতে পারলে ভালো হয়। ৭০-৮০টি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়ে ফেলেছ মনে হলে চিন্তামুক্ত হয়ে ‘উত্তর এমন হতে পারে; কিন্তু মনে পড়ছে না’- এ রকম প্রশ্নগুলোর জন্য চিন্তা করার সময় পাবে।

Comments

comments

Comments are closed.