বাদ পড়া ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ২৮০ জন শিক্ষার্থীকে যুক্ত করে ৩৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল নতুনভাবে প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। জনপ্রশাসন সচিব, শিক্ষাসচিব, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন। ৩৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পুনর্মূল্যায়িত ফলাফলে বাদ পড়া ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের করা রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গতকাল দেওয়া রায়ে ওই নির্দেশনা দেওয়া হয়। এই রায়ের ফলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষার লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে আইনগত কোনো বাধা রইল না বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আইনজীবী। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া এবং রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোখলেছুর রহমান।
গত বছরের ২৪ মে ৩৪তম বিসিএসের প্রাথমিক বাছাই (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষা হয়। কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করে ৮ জুলাই প্রকাশিত ফলে উত্তীর্ণ হয় ১২ হাজার ৩৩ জন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সময় কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করায় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৬০-৬৫ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হলেও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ৮০টি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়েও প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হওয়া থেকে বঞ্চিত হন। যদিও আগের বিসিএস পরীক্ষাগুলোয় মৌখিক পরীক্ষার পর কোটা পদ্ধতিতে বাছাই করা হলেও ৩৪তম বিসিএসে প্রথমবারের মতো প্রাথমিক বাছাইয়ের সময়ই কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা পদ্ধতি ও ৩৪তম বিসিএসের ফলাফল বাতিলের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের মুখে গত বছরের ১০ জুলাই ফল পুনর্মূল্যায়নের ঘোষণা দেয় পিএসসি। এরপর ওই বছরের ১৪ জুলাই প্রিলিমিনারির পুনর্মূল্যায়িত ফল প্রকাশ করে পিএসসি। এতে ৪৬ হাজার ২৫০ জন লিখিত পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ হন। তবে প্রথমবার ঘোষিত ফলের তালিকায় থাকা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ২৮০ জন সদস্য দ্বিতীয়বার প্রকাশিত তালিকা থেকে বাদ পড়েন। তাঁদের উত্তীর্ণ করার জন্য পিএসসিতে আবেদন করা হয়। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত না পেয়ে প্রথম ঘোষিত ফলাফলে উত্তীর্ণ ৫৯ জন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্য গত বছরের ২৮ জুলাই হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এ রিট আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। প্রথম ফলে উত্তীর্ণ ২৮০ জনকে বাদ দিয়ে প্রকাশিত ৩৪তম বিসিএসের প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষার পুনর্মূল্যায়িত ফল কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়। ওই রুলের নিষ্পত্তি করে হাইকোর্ট গতকাল ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বাদ পড়া ২৮০ সদস্যকে যুক্ত করে নতুনভাবে ফলাফল ঘোষণা করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
আদালতের রায়ের পর ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, এই রায়ের ফলে ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষায় পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণে আইনগত জটিলতার নিরসন হলো।
