জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় এসেছে অনেক পরিবর্তন। এবারই প্রথম অংশ নিতে হবে সৃজনশীল পদ্ধতিতে। রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের প্রভাষক মো. মঈন উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন রাহিম রাতুল
গণিতে এবারই প্রথম সৃজনশীল পরীক্ষাপদ্ধতি চালু হয়েছে। গতবারের সঙ্গে এবার প্রশ্নপত্রের কোনো ধরনের মিল থাকবে না বললেই চলে। গণিতে সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরের ধররও অন্যান্য বিষয় থেকে আলাদা। এখানে প্রতিটি প্রশ্নের তিনটি অংশ থাকবে। এগুলো হলো-সহজ, মধ্যম, কঠিন।
সহজ অংশে ২ নম্বর, মধ্যম অংশে ৪ নম্বর আর কঠিন অংশে থাকবে ৪ নম্বর। সহজ অংশে অন্যান্য বিষয়ের জ্ঞানমূলক অংশের মতো সংজ্ঞা আকারে আসতে পারে, নাও পারে। অর্থাৎ সহজ অংশের উত্তর উদ্দীপক থেকে পাওয়া যেতে পারে, আবার বাইরে থেকেও আসতে পারে। মধ্যম ও কঠিন অংশে সাধারণত উদ্দীপকে দেওয়া তথ্য ও উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে উত্তর করতে হবে।
বীজগণিত, পাটিগণিত, জ্যামিতি আর পরিসংখ্যান- এ চারটি বিভাগের ওপর ভিত্তি করে প্রশ্ন করা হবে। প্রতিটি বিভাগ থেকে কমপক্ষে একটি করে মোট ছয়টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানে একটিই প্রশ্ন থাকবে। কাজেই এখানে একটি থেকেই একটির উত্তর করতে হবে। কোনো বিকল্প থাকবে না। অন্যান্য বিষয়ের মতো এখানেও সৃজনশীল অর্থাৎ রচনামূলক প্রশ্নের ক্ষেত্রে থাকবে ৬০ নম্বর। আর বহুনির্বাচনী প্রশ্নের ক্ষেত্রে থাকবে ৪০ নম্বর।
রচনামূলক ৬০ নম্বরের জন্য পাটিগণিত অংশের প্যাটার্ন অধ্যায় থেকে কোনো বড় প্রশ্ন আসবে না, অন্যদিকে লাভ-ক্ষতি এবং পরিমাপ অধ্যায় থেকে অবশ্যই প্রশ্ন আসবে।
বীজগণিত অংশে প্রায় প্রতিটি অধ্যায় থেকেই প্রশ্ন আসবে। হয়তো বা একটি অধ্যায়ের সঙ্গে অন্য একটি অধ্যায়ের অঙ্ক একই প্রশ্নে যুক্ত আকারে আসতে পারে। কাজেই সব অধ্যায়ের অঙ্কই করতে হবে। কোনোটা বাদ দিলে সহজ, মধ্যম বা কঠি যেকোনো অংশের উত্তর করা সম্ভব নাও হতে পারে।
জ্যামিতির ক্ষেত্রে বিগত বছরগুলোর সম্পাদ্য বা উপপাদ্য মুখস্থ করে গেলেই চলত। কিন্তু এখন সৃজনশীল হওয়ার কারণে বুঝে বুঝে না পড়লে উত্তর করা যাবে না। আবার শুধু সম্পাদ্য বা উপপাদ্য যেকোনো একটি অংশ পড়লেও চলবে না। কারণ সম্পাদ্য এবং উপপাদ্য সংযুক্ত আকারে আসতে পারে। পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে প্রতিটি অনুশীলনীর শেষের প্রশ্নমালা পড়লেই চলবে।
পরিসংখ্যান এবারই নতুন অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তাই এবার ডিজিট পরিবর্তন করে অঙ্কের প্যাটার্ন বা ধরন অপরিবর্তিত রেখেই প্রশ্ন হতে পারে। বহু নির্বাচনী প্রশ্নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সূত্র, ছোট ছোট সমস্যা, অনুসিদ্ধান্ত ইত্যাদি ভালোভাবে আয়ত্তে আনতে হবে।
পাটিগণিত, বীজগণিত, জ্যামিতি ও পরিসংখ্যানের অনুশীলনীর শেষের প্রশ্নমালা থেকে ছোট ছোট সমস্যা আসতে পারে। এ ছাড়াও বইয়ের যেকোনো অংশ থেকেও প্রশ্ন হতে পারে। তাই পুরো বই একবার হলেও পড়ে যেতে হবে।
বহু নির্বাচনী প্রশ্নের ক্ষেত্রে পাটিগণিত অংশ থেকে ১২টি, বীজগণিত অংশ থেকে ১৫টি, জ্যামিতি থেকে ১০টি এবং পরিসংখ্যান অংশ থেকে তিনটি প্রশ্ন আসবে। এখানে পাটিগণিতের প্যাটার্ন অংশ থেকে অবশ্যই বহু নির্বাচনী প্রশ্ন আসবে। এ অংশটি বহু নির্বাচনীর জন্য ভালোভাবে পড়তে হবে।
গণিতে জিপিএ ৫ তোলা খবুই সহজ, গতবার ভুল হলে পুরো নম্বর কাটা যেত, এবার ভুল হলেও কিছু নম্বর পাওয়া যেতে পারে। সম্পাদ্য বা উপপাদ্যের চিত্র ভালোভাবে আঁকতে হবে। উদ্দীপকে দেওয়া নির্দেশ অনুসারে চিত্রের পয়েন্ট চিহ্নিত করতে হবে, না হলে নম্বর কাটা যাবে। ব্রাকেট, কমা ঠিকমতো দিতে হবে। যেখানে দরকার সেখানে ‘প্রায়’ লিখতে হবে। সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতির কারণে ভয় না পেয়ে সাহসের সঙ্গে উত্তর করলে ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব। আর প্রশ্নপত্রের ধরন সম্পর্কে আরো বিস্তারিত ধারণা পেতে বোর্ডের ওয়েবসাইটে দেওয়া গণিতের প্রশ্নপত্র অনুসরণ করা যেতে পারে।