দশম জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের (২০১৪-১৫) বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। দেশের ইতিহাসে বড় এই বাজেটের পরিমাণ ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কিছু পণ্যের কর বাড়ানো হয়েছে। আবার কিছু পণ্যের কর কমানো হয়েছে।
দাম বাড়ার তালিকায় উল্লেখযোগ্য পণ্য হলো গ্যাস সিলিন্ডার, বাইসাইকেল, গাড়ির টায়ার, মাইক্রোবাস, টায়ার, ফ্যানের মোটর, আমদানিকৃত বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতি, জ্বালানি তেল, ডাবল কেবিন পিকআপ, বিড়ি, সিগারেট, চিনি, স্টিল, রড, স্বর্ণ, স্বর্ণালঙ্কার, গাড়ি, প্রতিস্থাপিত মোবাইলের সিমকার্ড ইত্যাদি।
বেশ কিছু সেবা, যেমন-ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত লঞ্চ সার্ভিস, বাস সার্ভিস, রেলওয়ে সার্ভিস, মোটরগাড়ি গ্যারেজ ওয়ার্কশপ, ডকইয়ার্ড, ফটোনির্মাতা, ভূমি উন্নয়ন সংস্থা ও ভবন নির্মাণসংস্থা, সাধারণ রেস্তোরাঁ, ভূমি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে কর বাড়ায় বা নতুন করে করারোপ করায় এসব সেবা পেতে বাড়তি অর্থ গুনতে হবে গ্রাহকদের।
বাইসাইকেল
প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানিকৃত বাইসাইকেলের ওপর শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। ফলে আমদানিকৃত যেকোনোসাইকেলের ওপর প্রতিহাজারে কমপক্ষে ১৫০ টাকা হারে দাম বাড়বে।
মাইক্রোবাস
প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, দেশে মাইক্রোবাস এবং ডলব কেবিন পিকআপ আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সেকারণে ১৫০১ থেকে ১৮০০ সিসি পর্যন্ত মাইক্রোবাসের বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক ৩০শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৪৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৫০০সিসি পর্যন্ত ডবল কেবিন পিকআপের ওপর বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে৪৫ শতাংশে এবং ১৫০১ থেকে দুই হাজার ৭৫০ সিসি পর্যন্ত পিকআপে বিদ্যমান শুল্ক৪৫ শতাংশ থেকে ৬০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে।
গাড়ির টায়ার
নতুন শুল্কস্তর অনুযায়ী দাম বাড়ছেবাইসাইকেলের ১৫ থেকে ১৬ ইঞ্চি রিম টায়ারের। দেশে উৎপাদন হচ্ছে বলে আমদানিতে প্রযোজ্য শুল্ক ও করের সাথে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ হারে রেগুলেটরি ডিউটিপ্রয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। একই বিবেচনায় বাইসাইকেলের টিউবের আমদানিশুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
স্বর্ণ
বর্তমানে একজন যাত্রী বৈধভাবে ২০০ গ্রাম বা প্রায় ১৭ ভরি স্বর্ণের অলঙ্কার বিনা শুল্কে দেশে নিয়ে আসতে পারেন। আর ভরিপ্রতি ১৫০ টাকা শুল্কদিয়ে আনা যায় আরো ১৭ ভরি স্বর্ণের বার। অর্থমন্ত্রী শুল্কমুক্ত সুবিধায় স্বর্ণালঙ্কার আমদানির পরিমাণ কমিয়ে ৯ ভরি নির্ধারণ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। আর অতিরিক্ত সর্বোচ্চ ১৭ ভরি স্বর্ণে প্রতি ভরিতে ১৫০ টাকার পরিবর্তে তিন হাজার টাকা করে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছেন তিনি।
গ্যাসসিলিন্ডার ও এনার্জি সেভিং বাল্ব
আমদানিকৃত গ্যাস সিলিন্ডারের বিদ্যমান আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে বেড়ে যাবেগ্যাসসিলিন্ডারের দাম। একই উদ্দেশ্যে আমদানিকৃত এনার্জি সেভিং বাল্বের ওপর২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
বিভিন্ন সেবার ওপর শুল্ক আরোপ
প্রস্তাবিত বাজেটেমোটরগাড়ির গ্যারেজ ও ওয়ার্কশপ, ডকইয়ার্ড, ফটোনির্মাতা, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, ইমিগ্রেশন উপদেষ্টা ও পরিবহন ঠিকাদারের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সাড়ে ৪ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। এ ছাড়া ভূমি উন্নয়ন ও ভবন নির্মাণ সংস্থার ওপর দেড় শতাংশ মূসক থেকে ৩ শতাংশ, জুয়েলারি সেবার ক্ষেত্রে নিট মূসক ২ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশে এবং সাধারণ রেস্তোরাঁর ওপর নিট মূসক ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে এসব সেবা পেতে ব্যয় বাড়বে গ্রাহকদের।
মোবাইল সিম কার্ড ও হ্যান্ডসেট
বর্তমানে মোবাইল অপরেটরদের সিমকার্ডইস্যুর ক্ষেত্রে ৩০০ টাকা শুল্ক বা কর ধার্য আছে। প্রস্তাবিত বাজেটে তা অপরিবর্তিত রাখা হলেও সিম কার্ড প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে নতুন করে ১০০ টাকা কর ধার্য করা হয়েছে।
নতুন বাজেটে আমদানির ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব হওয়ায় মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেটের দাম বাড়বে।