প্রচ্ছদ > ভোজন > তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন
তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন

তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন

তেল দিয়ে ভাজা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিকেন ফ্রাই, শিঙাড়া, সমুচা, পুরি, সবজির বড়া, পিঠা ইত্যাদি খুবই জনপ্রিয় ও মুখরোচক খাবার। ছোট-বড় সবাই এ ধরনের খাবারের প্রতি দিন দিন আসক্ত হয়ে পড়ছে। অথচ অনেকেরই হয়তো অজানা যে, তেল দিয়ে ভাজা এসব খাবার আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কারণ খাবার তেলে বেশি ফ্রাই করলে বা ভাজলে এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়, ফলে এসব খাবার খেতে সুস্বাদু হলেও শরীরের তেমন কোনো কাজে লাগে না।

তেলের উৎস
সাধারণত তেল বা চর্বি দুই ধরনের উৎস থেকে পাওয়া যায়। প্রথমত, সম্পৃক্ত তেল বা চর্বি যেমন- ঘি, মাখন ইত্যাদি প্রাণিজ উৎস থেকে পাওয়া যায়। দ্বিতীয়ত, অসম্পৃক্ত তেল বা চর্বি যেমন- সয়াবিন তেল, সূর্যমুখী তেল, অলিভ অয়েল, বাদাম তেল, তিলের তেল ইত্যাদি উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে আহরণ করা হয়। রান্নার কাজে দুই ধরনের উৎস থেকে প্রাপ্ত তেলই ব্যবহার করা হয়।

ট্রান্সফ্যাট
ট্রান্সফ্যাট হলো এক ধরনের হাইড্রোজিনেটেড তেল বা ফ্যাট, যা রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এই ট্রান্সফ্যাট সাধারণ তাপমাত্রায় জমাট অবস্থায় থাকে। রক্তনালির রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত করে এবং স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। অত্যধিক তেলে ভাজা খাবারে উচ্চমাত্রার ট্রান্সফ্যাট থাকে।

অত্যধিক তেল দিয়ে ভাজা খাবারে স্বাস্থ্যঝুঁকি

* অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার সহজে হজম হয় না এবং রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
* এসব খাবার দেহে ক্যালরি ও চর্বির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় ফলে দেহের ওজন বাড়ে।
* রক্তনালিতে চর্বি জমাট বেঁধে রক্ত চলাচলে বাধা তৈরি করে।
* উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
* স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
* হৃৎপিণ্ডের নানা ধরনের রোগের সৃষ্টি করে।
* তেল দিয়ে ভাজা খাবার ডায়াবেটিসসহ যকৃৎ, ফুসফুস এবং অন্ত্রের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

তেলের ওপর তাপের ক্ষতিকর প্রভাব

* অতিরিক্ত তাপ তেলের রাসায়নিক গঠনকে পরিবর্তন করে এমন একটি রূপ দেয়, যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
* তাপ তেলে আর্কোলামিড নামক বিষাক্ত উপাদান তৈরি করে, যা দেহে ক্যান্সার সৃষ্টি করে।
* উচ্চতাপ তেলের আন্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা নষ্ট করে দেয়।

কোন ধরনের তেল ব্যবহার করা উচিত

তাপ প্রয়োগ করলে সূর্যমুখী তেলে বেশি পরিমাণ বিষাক্ত উপাদান তৈরি হয়। অন্যদিকে অলিভ অয়েলে এই বিষাক্ত উপাদান অন্য তেলের তুলনায় কম। কিন্তু অলিভ অয়েলের স্মোকিং পয়েন্ট (যে তাপমাত্রায় তেলের ওপর হালকা ধোঁয়া তৈরি হয়) কম হওয়ায় এই তেলে ডিপফ্রাই করা উচিত নয়। আবার সূর্যমুখী তেল, সয়াবিন তেলের স্মোকিং পয়েন্ট বেশি হওয়া সত্ত্বেও ডিপফ্রাইয়ে ব্যবহার করা ঠিক নয়, কারণ উচ্চ তাপে এতে ট্রান্সফ্যাট তৈরি হয়। গবেষকদের মতে, উচ্চ তাপে রান্না যেমন- ভাজা, গ্রিলিং, রোস্টিংয়ের জন্য অসম্পৃক্ত শোধিত কেনোলা বা শর্ষের তেল, পামতেল, নারিকেল তেল, ঘি উপযোগী।

একই তেল কতবার ব্যবহার করা যায়?
তেল একবার ব্যবহার করা হলেই এর রাসায়নিক গঠন পরিবর্তিত হতে থাকে। বারবার একই তেলে রান্না করলে পোড়া গন্ধ তৈরি হয়। সাধারণত তিনবারের বেশি তেল আবার ভাজার কাজে ব্যবহার করা উচিত নয়। প্রতিবার ব্যবহারের আগে তেল ছাঁকনিতে ছেঁকে নেওয়া উচিত। তেল গাঢ় বর্ণ ধারণ করলে এবং পোড়া গন্ধ পাওয়া গেলে সেই তেল ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যায়।

স্বাস্থ্যকর উপায়ে খাবার ভাজতে হলে মনে রাখতে হবে-
* তেলকে স্মোকিং পয়েন্ট অনুযায়ী তাপ দেওয়া।
* শর্ষের তেল, পামতেল, নারিকেল তেলসহ উচ্চ স্মোকিং পয়েন্ট সমৃদ্ধ তেল ব্যবহার করা।
* কখনোই দুই ধরনের তেলের মিশ্রণে খাবার ভাজা ঠিক নয়।
* খাবার ভাজার জন্য সঠিক পাত্র ফ্রাইপ্যান ব্যবহার করা উচিত।
* পাত্রে সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে হবে। একসঙ্গে অনেক খাবার একই রান্নার পাত্রে ভাজা উচিত নয়; কারণ এতে পাত্রের তাপমাত্রার পরিবর্তন হতে পারে, যা পাত্রে বিদ্যমান তেলের তাপমাত্রাও পরিবর্তন করে।
* খাবারের অতিরিক্ত তেল দূর করার জন্য ছাঁকনিজাতীয় চামচ ব্যবহার করতে হবে এবং খাবার ভাজার পর ন্যাপকিন ব্যবহার করতে হবে।

পরামর্শ দিয়েছেনঃ মাহফুজা মোবারক

পুষ্টিবিদ ও প্রভাষক

পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগ,

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

Comments

comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*