প্রশ্ন : আমার বয়স ২৪ বছর। আমি একটি ছেলেকে ভালোবেসে বিয়ে করি। বিয়ের দুই বছর পর স্বামী ও শাশুড়ি আমাকে শারীরিক নির্যাতন এবং প্রচণ্ড মারধর করেন। তারপর আমি আমার বাপের বাড়ি চলে আসি। এখন আমি অন্তঃসত্ত্বা, পাঁচ মাস ধরে স্বামী আমার কোনো খরচ বহন করেন না। তিনি তাঁর মাকে দিয়ে আমাকে চাপ দিচ্ছেন, যেন আমি নিজেই তাঁকে তালাক দিই। আমার বিয়েতে কাবিন হয়েছিল ১০ লাখ টাকার। আইনের সাহায্য নিতে হলে আমার করণীয় কী?
-শারমিন সুলতানা, চট্টগ্রাম
পরামর্শ : স্ত্রী তালাক দিলে দেনমোহর পরিশোধ করার ক্ষেত্রে স্বামী কোনো রকম সুবিধা লাভ করেন না। স্বামী বা স্ত্রী যেই তালাক প্রদান করুন না কেন, দেনমোহর পরিশোধযোগ্য। সুতরাং আপনি দেনমোহর দাবি করে পারিবারিক আদালতে মামলা করতে পারেন। আপনার স্বামীর আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় এনে আদালত কিসি্তর মাধ্যমে দেনমোহর পরিশোধের সুযোগ দিতে পারেন। আর গর্ভাবস্থায় তালাক হয় না।
প্রশ্ন : আমি একটি স্থানীয় কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শিক্ষকতা করি। আমার স্বামীর বাড়ি ও বাবার বাড়ি পাশাপাশি গ্রামে। ২০০৬ সালে আমার বিয়ে হয় পারিবারিকভাবেই। বিয়ের পর জানতে পারলাম, আমার স্বামীর পাঁচ লাখ টাকা ঋণ আছে। সে এই টাকা শোধ দেওয়ার জন্য আমার পরিবারকে চাপ দেয়। আমার পরিবারের পক্ষে এত টাকা দেওয়া অসম্ভব, এটা জানতে পারার পর সে এবং তার পরিবার মিলে আমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। আমার তিন বছরের একটি মেয়ে আছে। ওদের যন্ত্রণায় শ্বশুরবাড়িতে থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে ওঠে। আমি মেয়েকে নিয়ে বাবার বাসায় চলে এসেছি। এক বছর ধরে স্বামী আমাকে কোনো ভরণপোষণ দেয় না। আমি কোনো কাজে বের হলে তার পালিত কিছু বখাটে খুব বিরক্ত করে। আমার নামে কুৎসা রটায়। আমি আর তার সংসার করতে চাই না। ভরণপোষণ চাইলে উল্টো ধমক দেয়। কিভাবে আমি আমার দেনমোহর ও ভরণপোষণের টাকা পেতে পারি? আইনগত কী উপায়ে আমি আমার মেয়েকে আমার কাছে রাখতে পারি, যাতে সে কখনো দাবি না করতে পারে? আমি কোথায় গেলে কম খরচে আইনগত সহায়তা পাব?
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, বরিশাল
পরামর্শ : আপনি পারিবারিক আদালতে আপনার ও আপনার মেয়ের ভরণপোষণ ও দেনমোহরের পাওনা অর্থ দাবি করে মামলা করতে পারেন। আইনগতভাবে আপনি আপনার মেয়েকে তার বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত আপনার হেফাজতে রাখতে পারেন। আপনি আইনগত সহায়তার জন্য আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ব্লাস্ট, জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি ও আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে পারেন। এসব প্রতিষ্ঠান মামলা করার ব্যাপারে সহায়তা করে থাকে।
প্রশ্ন : পারিবারিক সম্মতিতেই ২০০৮ সালে আমাদের বিয়ে হয়। বিয়ের দুই মাস পর বুঝতে পারলাম, আমার স্বামীর সঙ্গে তাঁর বড় ভাইয়ের স্ত্রীর প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। তাঁর স্বামী বিদেশ থাকেন। আমাদের বিয়ের তিন মাস পর আমার শ্বশুর এবং চার মাস পর আমার বাবা মারা যান। ফলে তাঁরা আরো উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়েন। এর মধ্যে আমার স্বামী আমাকে বাপের বাড়িতে রেখে চলে যান। এখন তিনি ভাবিকে দিয়ে আমাকে চাপ দিচ্ছেন, যেন আমিই তাঁকে তালাক দিয়ে দিই। আমাদের বিয়েতে কাবিন হয়েছিল চার লাখ টাকা। তাই তিনি চাচ্ছেন, যাতে আমিই তাঁকে তালাক দিয়ে দিই। ছয় মাস ধরে তিনি আমার কোনো খরচ বহন করেন না। এ অবস্থায় আমি কিভাবে আইনের সাহায্য নিতে পারি।
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, মতলব, চাঁদপুর।
পরামর্শ : কাবিননামার অর্থ বা দেনমোহর স্ত্রীর কাছে স্বামীর একধরনের ঋণ। এ ঋণ চাহিবামাত্র পরিশোধযোগ্য। সুতরাং আপনার স্বামী বা আপনি যে পক্ষই তালাক দেন না কেন, কাবিননামার চার লাখ টাকা আপনার স্বামী আপনাকে দিতে বাধ্য। ভরণপোষণের জন্য আপনি মুসলিম পারিবারিক আদালতে মামলা করতে পারেন।
প্রশ্ন : প্রেম করে বিয়ে করি। আমরা দুজনই প্রাপ্তবয়স্ক। আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা কিছুদিন আগে জানাজানি হয়। একপর্যায়ে ওর বাবা ওকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক কাজী অফিসে নিয়ে তালাকনামায় সই করান। কয়েক মাস হয়ে গেল তালাকনামায় সই করিয়েছেন; কিন্তু এর মধ্যে আমার কাছে কোনো তালাকের নোটিশ বা তালাকনামা বা অন্য কোনো কাগজ পাঠাননি। আমার জিজ্ঞাসা, এতে কি তালাক কার্যকর হয়েছে? হয়ে থাকলে কাবিননামায় উলি্লখিত দেনমোহর কি আমাকে পরিশোধ করতে হবে?
-আবির হোসেন, দাউদকান্দি, কুমিল্লা
পরামর্শ : চিঠির তথ্য অনুযায়ী আপনাদের তালাক কার্যকর হয়নি। সুতরাং আপনাদের বিয়ে এখনো বৈধ আছে। এখানে আরো উল্লেখ্য, তালাকের সঙ্গে দেনমোহরের কোনো সম্পর্ক নেই। দেনমোহর হচ্ছে স্বামীর কাছে স্ত্রীর একধরনের পাওনা এবং তা চাহিবামাত্র পরিশোধযোগ্য।
প্রশ্ন : আমি হিন্দু ধর্মাবলম্বী। একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। আমি তিন বছর ধরে একটি বিবাহিত মেয়েকে ভালোবাসি, সেও আমাকে খুব ভালোবাসে। তার স্বামী মাদকাসক্ত। প্রায়ই তাকে নির্যাতন করে, কিছুদিন আগে আমাদের সম্পর্কের কথা দুই পরিবার জেনে যায়। তারপর থেকে তার স্বামীর নির্যাতন আরো বেড়ে গেছে। এখন মেয়েটি আমাকে চাপ দিচ্ছে তাকে বিয়ে করার জন্য; কিন্তু কোনোমতেই রাজি করাতে পারছি না আমার মা-বাবাকে। এখন সে আমাকে বলছে, পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার জন্য। নতুবা স্বামীর ঘর ছেড়ে সরাসরি আমার ঘরে চলে আসবে। আমিও তাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে চাই। এমন অবস্থায় আমার করণীয় কী?
-চন্দন, সিরাজগঞ্জ
পরামর্শ : আমাদের দেশে হিন্দু আইনে বিবাহবিচ্ছেদের কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং বিবাহিত মেয়েটি হিন্দু ধর্মাবলম্বী হলে তাকে আইনসম্মতভাবে বিয়ে করা সম্ভব নয়। বিবাহিত মেয়েটি মুসলমান ধর্মাবলম্বী হলে তালাকের মাধ্যমে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে। পরবর্তী সময়ে আপনি মুসলমান ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে মেয়েটিকে বিয়ে করতে পারেন।
পরামর্শ দিয়েছেন :
রাজিব কুমার চক্রবর্তী
আইনজীবী, জজ আদালত, ঢাকা।
বিনা পয়সায় আইনী পরামর্শ
কোনো আইনি সমস্যায় পড়লে ই-মেইলে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন আমাদের কাছে। প্রশ্ন হতে পারে আইন-আদালত, পারিবারিক সমস্যা, উত্তরাধিকার, মানবাধিকারসহ নানা বিষয়ে। অভিজ্ঞ আইনজীবী আপনাদের আইনি সমস্যার সমাধান দেবেন। প্রশ্নের সঙ্গে নিজের নাম, ঠিকানা ও মুঠোফোন নম্বর পাঠাতে ভুলবেন না।
আমাদের ই-মেইল ঠিকানা :
infopediabd@gmail.com
mail@infopediabd.com