পশ্চিম আফ্রিকায় এবোলা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়া দেশগুলো থেকে আসা যাত্রীদের পরীক্ষায় দেশের সব বিমান, সমুদ্র ও স্থল বন্দরে বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, ইমিগ্রেশনসহ সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে নিয়ে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন মাস এই ব্যবস্থা কার্যকর থাকবে। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পর্যালোচনার ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
পশ্চিম আফ্রিকায় প্রাণঘাতী এবোলা ভাইরাস মহামারীর আকারে ছড়িয়ে পড়ায় গত শুক্রবার ‘আন্তর্জাতিক সতর্কতা’ জারি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। লাইবেরিয়া, গিনি, সিয়েরা লিওন ও নাইজেরিয়াতে এবোলা ভাইরাসের সংক্রমণে এ পর্যন্ত ৯৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে। লাইবেরিয়া সরকার ইতোমধ্যে সে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। ডব্লিউএইচও বলছে, এবোলা যেভাবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে তা ‘অভাবনীয়’। এ ভাইরাস বিশ্বব্যাপী আরো ছড়িয়ে পড়লে তার পরিণতি হবে মারাত্মক।
রোববার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহেদ মালেক ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বলেন, যেসব দেশে এবোলা ছড়িয়ে পড়েছে, সেসব দেশেই আক্রান্ত রোগীদের দেশত্যাগ করতে না দেয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। তারপরও বাড়তি সতর্কতা হিসাবে বাংলাদেশে সব বিমান, সমুদ্র ও স্থল বন্দরে এই পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এবোলা ভাইরাস বাংলাদেশে ছড়ানোর ঝুঁকি খুবই কম। তাছাড়া পশ্চিম আফ্রিকার এবোলা সংক্রমণের দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি বিমান যোগাযোগও নেই। তারপরও বিদেশ থেকে আসা কারো দেহে এবোলা ভাইরাসের সংক্রমণ সনাক্ত হলে তাকে আলাদা করে চিকিৎসা দেয়ার জন্য বিমানবন্দরের কাছে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একটি আলাদা ওয়ার্ড খোলা হবে বলে অধ্যাপক মাহমুদুর জানান।
তিনি দাবি করেন, “আমাদের বিশ্বাস এই মুহূর্তে আমাদের সক্ষমতা আছে। আমরা প্রতিবছরই নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধে কাজ করছি। এবোলার মতো এই ভাইরাসে আক্রান্তেও মৃত্যুর হার অনেক। দ্রুততার সঙ্গে যে কোনো নতুন ভাইরাস শনাক্ত করার মতো ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা আমাদের রয়েছে।”
এবোলা ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কার হয়নি। প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত রোগীদের ৯০ শতাংশই মারা যাচ্ছিলেন। তবে বর্তমানে তা কমে ৬০ শতাংশে নেমে এসেছে।
এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর, রক্তক্ষরণ, স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি, ডায়রিয়া ও বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়। সংক্রমণের পর রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় ২ থেকে ২১ দিনের মধ্যে। ১৯৭৬ সালে কঙ্গোয় প্রথমবারের মতো সনাক্ত হয় এবোলা ভাইরাস, যার নাম রাখা হয় সে দেশের একটি নদীর নামে।
