প্রচ্ছদ > স্বাস্থ্য > মনোজগৎ > করোনা বনাম কোয়ারেন্টাইন
করোনা বনাম কোয়ারেন্টাইন

করোনা বনাম কোয়ারেন্টাইন

আবুল কালাম আজাদ :::

সমগ্র দেশবাসী এই মুহূর্তে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে হোম কোয়ারেন্টাইন বা সেলফ কোয়ারেন্টাইনে আছেন । আপনাদের সকলকে এই মহৎ দায়িত্ব পালন করার জন্য ধন্যবাদ । বিশেষ করে আগামী পনেরো দিন এই কোয়ারেন্টাইন খুবই গুরুত্বপূর্ণ । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পর্যবেক্ষণ মতে আমরা এখনো ঝুঁকির মধ্যে আছি । প্রতিদিন এর সংক্রমন বৃদ্ধি পাচ্ছে । তাই সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাবধানতার সাথে চলতে হবে । সকলের জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে এবং ঘরেই থাকুন, এর কোনো বিকল্প নেই ।

আমি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে কাজ করছি । আমরা কিন্তু দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা পালা ক্রমে দায়িত্ব পালন করছি। আমাদের পরিবারের সদস্যরা আমাদের জন্য চিন্তিত। আমাদের কিন্তু দায়িত্ব পালন করতেই হবে । আপনি কি ভাবতে পারেন যদি এমনটি হয় যে মাত্র সাত দিনের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে বিদ্যুতের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলে হোম কোয়ারেন্টাইন চলে যায়। সমগ্র দেশ অচল হয়ে যাবে । গ্যাস, পানি, পাখা, বাতি, হাসপাতাল, অফিস, যন্ত্রপাতি সবকিছু অচল বিদ্যুৎ ছাড়া ।

তবে খুবই দুঃখের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, আমরা যারা জরুরি সেবা প্রদানকারী সংস্থায় কর্মরত আছি যেমন বিদ্যুৎ, গ্যাস, ওয়াসা, চিকিৎসক, নার্স, সাংবাদিকদের মধ্যে কেউ কেউ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে কোয়ারেন্টাইন অথবা গা ঢাকা দিয়ে আছেন । এটা নৈতিকতার বড় অবক্ষয়। আশা করি জাতির এই দুঃসময়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সম্পর্কে খতিয়ে দেখবেন।

আপনি বলতে পারেন, দু-চারজন গা ঢাকা দিলে এমন আর কি ক্ষতি হবে? উত্তরটা খুব সহজ। ধরুন গ্যালারি ভর্তি দর্শক, মাঠে খেলোয়াড় কিন্তু এগারো জন। এর মধ্যে যদি দুইজন খেলোয়াড় না খেলে দর্শকের সারিতে গিয়ে বসে। বাকি নয়জন জীবন বাজি রেখে লড়াই করার পরেও জয় অনিশ্চিত । তাই সতের কোটি জনগণ দর্শক হলে চলবে না, চাই মাঠে প্রয়োজনীয় খেলোয়াড় ।

আমার পরিবারের অনেক সদস্যরা ঢাকার বাইরে বিদ্যুৎ বিভাগে কর্মরত আছে। যার মধ্যে আমার ছেলে ও ভাই রয়েছে। তাদেরকে আমি দায়িত্ব পালন করার জন্য বলেছি এবং তারা নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছে। তাদেরকে আমি বলেছি, “Right now you are the player, not audience”. হোম কোয়ারেন্টাইন তোমাদের জন্য নয়। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং সাবধানতার সাথে সবকিছু ব্যবস্থাপনা করতে হবে ।

আমরা বাঙ্গালী জাতি, আমাদের আছে হাজার বছরের বীরত্বের ইতিহাস । আছে জয় ছিনিয়ে আনার ইতিহাস । বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনে আমরা জীবন দিয়েছি, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আমরা জীবন দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আজ করোনা যুদ্ধে জিততে হলেও যুদ্ধ করে যেতে হবে ।

এখানে আমার কবি মধুসূদন দত্তের মেঘনাদ বধ কাব্যের একটি উদ্ধৃতি মনে পড়ে –

”জন্মভূমি-রক্ষাহেতু কে ডরে মরিতে?
যে ডরে, ভীরু সে মূঢ়; শতাধিক তারে।”

পরিশেষে একটি অনুরোধ করবো, আমরা জরুরি সেবা প্রদানকারী সংস্থায় কর্মরত সকলেই মাঠে থাকব। আপনি আমাদের জন্য ঘরে থাকুন ।

লেখকঃ জিএম ও প্ল্যান্ট ম্যানেজার, ঢাকা নর্দার্ন পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড।

.

Comments

comments

Comments are closed.