এ. কে. আজাদ :::
আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি এবং লাল সবুজের পতাকা ছিনিয়ে এনেছি । একাত্তরের ঘাতক ও হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল পেশাজীবী মানুষ হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আজ আমাদের সামনে আর এক যুদ্ধ, করোনা যুদ্ধ। তবে আমাদের এ যুদ্ধের শত্রু অদৃশ্য। আমাদের এক অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। COVID-19 বা করোনা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত দেখা যায় না এবং এর অবস্থানও বুঝা যাচ্ছে না। আমাদের এ লড়াইটা একটু ভিন্ন ধরনের। করোনা মোকাবিলায় সকলকে ধৈর্য ধারণ করে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে এবং সাবধানতার সাথে সবকিছু ব্যবস্থাপনা করতে হবে ও সরকারের নির্দেশনা অনুসারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে । আমরা যারা জরুরী সেবা প্রদানকারী সংস্থায় কর্মরত আছি যেমন চিকিৎসা, বিদ্যুৎ, ওয়াসা, গ্যাস, জ্বালানি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সশস্ত্র বাহিনী, সাংবাদিক ও প্রশাসনিক দফতরের সংশ্লিষ্ট লোকজন কিন্তু দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি । আমাদের কিন্তু হোম কোয়ারেন্টাইনের সুযোগ নেই। আমরা লড়াই করে যাচ্ছি, যাবো ইনশা-আল্লাহ।
মুক্তিযুদ্ধের পরে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি এবং মুক্তিযুদ্ধের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ জাতি তাঁদের পুরস্কৃত করেছে বিভিন্ন খেতাব এবং সুযোগ সুবিধার মাধ্যমে । এ ছাড়াও সমাজে বিভিন্ন অবদানের জন্য, যেমন শিক্ষা, সাংস্কৃতি, সমাজ সেবা ইত্যাদি বিষয়ে স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক এমনটি আরো অনেক পদক প্রদান করা হয় । আশা করি ভবিষ্যতে করোনা যুদ্ধে চুড়ান্ত জয়ের পরে বিশেষ কোন জাতীয় কোন পুরস্কারে ভূষিত করা হবে অনেককে। এটাই স্বাভাবিক।
আমি অনেক দিন ধরে লক্ষ্য করে আসছি, আমরা যারা বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিতরন ও সঞ্চালন কাজে নিয়োজিত আছি, আমাদের অবদানের কথা তেমন একটা আলোচনা হয় না। আমরা কিন্তু দিন রাত চব্বিশ ঘণ্টা, সারা বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছি। ঈদ, রোজা, পহেলা বৈশাখ, পূজা পার্বণ, শীত, গ্রীষ্ম, বসন্ত আমরা কিন্তু দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। আমাদের জীবনে কোনো লক ডাউন, শাটডাউন, কোয়ারেন্টাইন নেই । জাতির এই ক্রান্তিকালে ডাক্তার নার্সদের পাশাপাশি আমরা বিদ্যুৎ বিভাগ, সাংবাদিক, ফায়ার সার্ভিস, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সশস্ত্র বাহিনী ইত্যাদি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। যে কোন সেবার পেছনে তাকালে আপনাকে আমাদের (বিদ্যুৎ বিভাগকে) দেখতে হবে। আশা করি জাতির এই দুঃসময় অচিরেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের শুরু আছে, শেষ নেই। আমরা মানব সভ্যতা যতদিন আছে আমরাও তত দিন থাকবো ইনশা-আল্লাহ।
আমার পরিবারের সদস্যরা আমাকে প্রশ্ন করে, কোয়ারেন্টাইনে আবার কিসের ডিউটি । আমি বলি, তোমাদের এসি, ফ্রিজ, পাখা সবই চলছে কিভাবে ? আপনারা সকলে মিলে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন, আপনারা মুভি দেখছেন, এসি চালাচ্ছেন, কেউ আবার টিকটক বানাচ্ছেন কিন্তু আপনাদের এই সকল কর্মকান্ডের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ কিন্তু আমরা উৎপাদন করছি। আপনাদের টিভির পর্দায় হয়তো আমরা নেই তবে আড়ালে ছিলাম, আছি ও থাকবো। আমাদের এই যুদ্ধ থেকে সরে যাওয়ার সুযোগ নেই, নেই গা ঢাকা দেয়ার কোন সুযোগ বা ইচ্ছা। কেননা জাতির কাছে আমরা দায়বদ্ধ।
তাই বিদ্যুৎ মন্ত্রনালয়ের কাছে আমাদের আবেদন অন্তত আমাদের অবদানের কথা যেন সরকারের কাছে তুলে ধরা হয় এবং আমাদেরকেও যেন পুরস্কৃত করা হয়। তবে আমরা আরো বেশি বেশি উৎসাহিত হবো। তবেই আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে।
পরিশেষে একটি অনুরোধ করবো, আপনারা সবাই পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত বাসায় থাকুন, নিরাপদ থাকুন, সুস্থ থাকুন। সকলের দোয়া চাই। ভুল হলে ক্ষমা করবেন।
লেখকঃ জিএম ও প্ল্যান্ট ম্যানেজার, ঢাকা নর্দার্ন পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড।
.