প্রচ্ছদ > খেলা > খেলার খবর > ব্রাজিল বিশ্বকাপের থিম সং ‘ওলে ওলা’
ব্রাজিল বিশ্বকাপের থিম সং ‘ওলে ওলা’

ব্রাজিল বিশ্বকাপের থিম সং ‘ওলে ওলা’

দরজায় কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ ফুটবল। ফুলবলের দেশ ব্রাজিলে এ জমজমাট আসর শুরু হওয়ার আর মাত্র ২৪ দিন বাকি। এর মধ্যেই বিশ্বকাপের অফিসিয়াল থিম সং ‘ওলে ওলা’ (আমরা এক) -এর ভিডিও মুক্তি পেলো।
ইউটিউবে মুক্তি পেয়েই হইচই ফেলে দিয়েছে গানটি। ১৬ মে মুক্তি পাওয়ার পর ইতোমধ্যে প্রায় ৮৫ লাখ বার দেখা হয়েছে। লাইক পড়েছে ৮২ হাজার।
বিখ্যাত আমেরিকান শিল্পী পিটবুল ও পপ গায়িকা জেনিফার লোপেজ কণ্ঠ দিয়েছেন গানটিতে। তাদের সঙ্গে রয়েছেন ব্রাজিলের গায়িকা ক্লদিয়া লিটে। তিনি ব্রাজিলিয়ান পর্তুগিজ ভাষায় গান গেয়েছেন।
প্রচলনটার শুরু ১৯৬২ চিলি বিশ্বকাপ থেকে। থিম সংয়ের নাম- ‘এল রক ডি মুন্ডিয়াল’। ইংরেজিতে- দ্য রক দ্য ওয়ার্ল্ড। জ্যাজ এবং রক ধাঁচের মিশ্রণে দ্য র‌্যাম্বলার্সের গাওয়া এ থিম সং সে সময়ই বিক্রি হয়েছিল ৮০ হাজার কপি। গানটির জনপ্রিয়তা কিন্তু এর পরই ফুস করে নিভে যায়নি। একুশ শতকের শুরুতে ‘দ্য রক দ্য ওয়ার্ল্ড’-এর আরও দুই মিলিয়ন কপি লুফে নেন সঙ্গীতপিপাসুরা।
জম্পেশ অভিষেক ঘটায় বিশ্বকাপের থিম সংকে এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ‘৬৬-তে এলো ওয়ার্ল্ড কাপ উইলি, ‘৭০-এ ‘ফুটবল মেক্সিকো’র ধারাবাহিকতায় প্রতিটি বিশ্বকাপ আসরকেই আলাদা ব্যঞ্জনা এনে দিয়েছে থিম সং। তবে ফুটবলপ্রিয় বাঙালির কাছে বিশ্বকাপ থিম সংয়ের আবেদনটা পৌঁছেছে আরও দেরিতে।
১৯৯৮ ফ্রান্স বিশ্বকাপে রিকি মার্টিনের গাওয়া ‘দ্য কাপ অব লাইফ’ গানটি লুফে নেওয়ার মধ্য দিয়েই মূলত থিম সংয়ের সঙ্গে প্রাথমিক পরিচয়টা সেরে ফেলে বাংলাদেশের ফুটবলভক্তরা। তবে জাপান-কোরিয়া বিশ্বকাপে ‘অ্যান্থিম’ গানটি দুনিয়াজুড়ে এক লাখ কপি বিক্রি হলেও এ দেশে তেমন চলেনি।
তার পরের আসরের থিম সং ‘সেলিব্রেট অব দ্য ডে’ও তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে ‘ওয়াকা ওয়াকা’ গেয়েই বাজিমাত করে দেন পপ তারকা শাকিরা। ইউটিউবে গানটিতে ক্লিকের সংখ্যা ৬৬ কোটিরও বেশি।
এবার আর শাকিরা নেই, তিনজন জনপ্রিয় তারকা গাইছেন ব্রাজিল বিশ্বকাপের থিম সং। নামগুলো বেশ বড়- মার্কিন সঙ্গীতশিল্পী এবং অভিনেত্রী জেনিফার লোপেজ, কিউবান র‌্যাপ তারকা পিটবুল এবং ব্রাজিলিয়ান শিল্পী ক্লদিয়া লেইতে। রেকর্ডিং শেষ হওয়ার পর মে মাসের শুরুতেই রিলিজ পায় অ্যালবামটি। যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের জরিপ অনুযায়ী গানটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে ব্রাজিলে। অনেকেই মনে করছেন ‘ওলে, ওলা’র মধ্যে ব্রাজিলিয়ান কোনো সুর নেই এবং সুরটা বেশ গতানুগতিক।
ইংরেজি, পর্তুগিজ এবং স্প্যানিশ ভাষায় গানটি বাজারে ছাড়া হয়েছে। সনি মিউজিক এন্টারটেইনমেন্টের ব্যানারে বাজারে আসা থিম সংটির ভাবার্থ হলো- ঐক্য, সংহতি এবং ধৈর্য। গানটিতে ড্রামের ব্যবহার দারুণ মুগ্ধ করেছে ব্রাজিলিয়ানদের। তার কারণ বোধহয় ড্রামার হিসেবে গানটিতে সুরারোপ করেছে ব্রাজিলেরই ব্যান্ড ওল্ডড্রাম। কিন্তু পারকিউশনের ব্যবহারে ব্রাজিলিয়ানরা বেশ বিরক্ত। লা টাইমসকে দেওয়া বিবৃতিতে স্থানীয় শিল্পীগোষ্ঠী ‘আর৭’ জানায়, ‘অনেকেই হয়তো গানটি বেশ পছন্দ করেছে। কিন্তু অনেকে আবার হতাশও হয়েছে। কারণ এ গানে ব্রাজিলিয়ান সুর অনুপস্থিত।’
তবে, সমস্যা শুধু গানের সুরেই নয়, ভিডিওতেও আছে। ব্রাজিলিয়ানদের প্রত্যাশা ছিল, গানটির ভিডিও ফুটেজে ফুটবলের প্রভাবই বেশি থাকবে। কিন্তু তার বদলে সার্কাস, সাম্বা নাচিয়ে, খালি পায়ের শিশু, ক্যাপিওরা যোদ্ধাদের প্রভাবই বেশি রাখা হয়েছে। ব্যাপারটা ভালো লাগেনি ২০১৪ বিশ্বকাপের আয়োজক দেশটির জনগণের। টুইটারে তাই এক ব্রাজিলিয়ান ফিফার কাছে জানতে চেয়েছে, ‘এই যে ফিফা, শাকিরাকে দিয়ে আবারও ওয়াকা ওয়াকা গানটা গাওয়ানো যাবে কি?’
‘ওলে, ওলা’র ইংরেজি ‘উই আর ওয়ান’। অর্থাৎ ‘আমরা সবাই এক’। কিন্তু গানটি শোনার পর ঐক্যের ব্যাপারে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ছে ব্রাজিলিয়ানরা। তাদের অভিযোগ, কোনো স্থানীয় শিল্পী ব্যবহার করা হয়নি। লরেন এডলেস্টইন নামে এক ব্রাজিলিয়ান টুইটারে মন্তব্য করেন, ‘গানটা খুব হতাশ করেছে। বিশ্বকাপ তো ব্রাজিলে? তাহলে দুই ভিনদেশি গায়ক এবং গোটা গানটার বেশিরভাগই ইংরেজিতে গাওয়ার মানে কী? গোটা সুরটাই ক্যারিবিয়ান ধাঁচের। ব্রাজিলিয়ান বিটের ছিটেফোঁটাও নেই। এবারের বিশ্বকাপটা বোধহয় ক্যারিবিয়ান দেশগুলোতেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে!’
১৯৮২ স্পেন বিশ্বকাপেই সর্বপ্রথম স্থানীয় গায়ককে দিয়ে থিম সং গাওয়ানো হয়। প্লাছিডো ডমিনিগোর কণ্ঠে ‘এল মুন্ডিয়াল’ শিরোনামের ওই গানটি তুুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ফিফার জরিপ অনুযায়ী, বিশ্বকাপের থিম সংগুলোর মধ্যে ১৯৯৮, ২০১০, ১৯৯০, ১৯৮২ এবং ১৯৭৪ আসরের গানগুলোই বেশি জনপ্রিয়।
২০১৪ বিশ্বকাপে ‘ওলে, ওলা’ কতখানি ঝড় তুলবে, তা সময়ই বলে দেবে।

Comments

comments

Comments are closed.