মানিকগঞ্জ জেলা সদর থেকে ১৭ কিলোমিটার উত্তরে বালিয়াটি গ্রাম। ঢাকা থেকে বড়জোর তিন ঘণ্টার পথ। ঘুরে এসে জানাচ্ছেন শুক্লা হালদার
এক স্নিগ্ধ সকালে আমরা মাইক্রোবাসে করে রওনা দিয়েছিলাম বালিয়াটি জমিদার বাড়ি দেখতে। নাস্তার জন্য পথে এক হোটেলে থেমিছিলাম। সঙ্গে থাকা শিশুদের নিয়ে গরম গরম পরোটা খেতে মজাই হয়েছিল।
জমিদার বাড়ির কাছে মাইক্রোবাস থেকে নামতেই দেখি পুকুর পাড়ের পাশে একটা ছোট্ট শিশু পার্ক। শিশুদের আনন্দে বাড়তি মাত্রা যোগ হয়। কিছুক্ষণ হুড়োহুড়ি আর লুটোপুটি করে সিংহদ্বার পেরিয়ে বালিয়াটি প্রাসাদে যাই।
খোলা প্রকৃতির মাঝে বালিয়াটি জমিদার বাড়ি এক মায়াময় রাজ্য। বাড়িটির সম্মুখভাগে চারটি বিশাল প্রাসাদ। প্রাচ্য আর পাশ্চাত্য স্থাপত্যরীতির মিশেলে তৈরি। চারটি প্রাসাদের উচ্চতা দূর থেকে প্রায় একই রকম মনে হয়। মাঝখানের দুটি প্রাসাদ দু’তলা আর দুপাশের দুটি তিনতলা। এক নম্বর প্রাসাদটি আগে কলেজ হিসেবে ব্যবহূত হতো। দর্শনার্থীরা দুই নম্বর প্রাসাদটিই ঘুরে দেখেন বেশি। এখানে জমিদারদের ব্যবহূত নির্দশনাদি প্রদর্শিত হয়। এসবের মধ্যে রয়েছে সিন্দুক, ছোট বড় আয়না, ঝাড়বাতি, লণ্ঠন, শ্বেত পাথরের ষাঁড়, টেবিল, পালঙ্ক, আলনা, কাঠ ও বেতের চেয়ারসহ আরও অনেককিছু। মজলিস কক্ষের দেয়ালে হাতে আঁকা চমৎকার সব ছবি আছে।
এরপর যাই অন্দরমহলে। এখানে ছিল অতিথিদের থাকার জায়গা, রন্ধনশালা এবং পরিচারিকাদের থাকার ঘর। এখানেও একটি পুকুর আছে। পুকুরের চারপাশে অনেকগুলো বাঁধানো ঘাট আছে।
উনিশ শতকের দিকে বালিয়াটি জমিদার বাড়ির ইমারতগুলো নির্মিত হয়। বালিয়াটি জমিদারদের পূর্বপুরুষ গোবিন্দ রায় সাহা ছিলেন একজন লবণ ব্যবসায়ী। গোবিন্দ রায়ের পরবর্তী বংশধর দাধী রাম, পন্ডিত রাম, আনন্দ রাম ও গোলাপ রাম এসব ইমারত প্রতিষ্ঠা করেন। এগুলো গোলাবাড়ি, পূর্ব বাড়ি, পশ্চিম বাড়ি, মধ্য বাড়ি ও উত্তর বাড়ি নামে পরিচিত। গোলাবাড়ি নামকরণ হয়েছিল লবণ রাখা হতো বলে। গোলাবাড়ির চত্বরে বারুনির মেলা বসত এবং পশ্চিম বাড়ির তাল পুকুরের ধারে বসত রথ উৎসব। বালিয়াটি জমিদার বাড়ি ৫.৮৮ একর জমির ওপর। ৭টি ইমারতে ঘর আছে ২০০টি। সমরেন্দু সাহা লাহোরের লেখা ‘বালিয়াটির যত কথা’ বইটি থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
১৯৮৭ খিষ্ট্রাব্দে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বালিয়াটি জমিদার বাড়ি অধিগ্রহণ করে এবং এখন এর সংস্কার কাজ চলছে। পুরানো এই স্থাপত্যের আছে দারুণ আভিজাত্য। এর সৌন্দর্য মনে ঢেউ তোলে। ফিরে আসার পথ ধরতে কষ্ট হয়।
ছবি : সঞ্জীব দেবনাথ
কিভাবে যাবেন
ঢাকার গাবতলী থেকে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া বাজার পর্যন্ত বাসে যাওয়া যায়। ভাড়া-৭৫ টাকা। এরপর রিকশায় বালিয়াটি জমিদার বাড়ি যেতে ভাড়া লাগে ১০ টাকা)। এছাড়া মানিকগঞ্জ থেকে বাসে জমিদার বাড়ি যেতে ভাড়া লাগে ১৫ টাকা।