প্রচ্ছদ > ভ্রমণ > ভ্রমণ টিপস > কাছে দূরের কাশবন
কাছে দূরের কাশবন

কাছে দূরের কাশবন

মুস্তাফিজ মামুন :::
‘ইটের পরে ইট, মাঝে মানুষ কীট’— কবিগুরুর এই কবিতা যেন আমাদের নগরবাসীদের জন্যই লেখা! ইট পাথরের চারদেয়ালে বন্দী মনটাকে একটু সময়ের জন্য খোলা হাওয়ায় ছেড়ে দিয়ে প্রকৃতির কোমলতাকে স্পর্শ করতে চাইলে চলুন কাশবনে। ঢাকার কাছে কিংবা দূরে অনেকে জায়গাতেই বসেছে কাশের মেলা।
বছিলা আর ঢাকা উদ্যান হাউজিংয়ে ঢাকা শহরের সবচেয়ে কাছে কাশবন আছে। এ দুইটি এলাকার চারদিক এখন শ্বেত কাশফুলে একাকার।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর ভেড়িবাঁধের পশ্চিম পাশেই ঢাকা উদ্যান হাউজিং। প্লট তৈরির জন্য বালু ভরাট করা জায়গাগুলোই এখন কাশফুলে একাকার। আর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের পেছনে বছিলা সেতুর উত্তর পাশের জায়গাগুলোও কাশফুলে ছেয়ে গেছে। এখান থেকে দূরে ঢাকা শহরের দালানগুলো কাশফুলের উপরে ভাসমান মনে হয়। ধানমন্ডি বা মোহাম্মদপুর থেকে রিকশা কিংবা বেবিটেক্সিতে সহজেই যাওয়া যায় জায়গা দুটিতে।
কেরাণীগঞ্জের হযরতপুর কাশফুলের আরেক জগৎ। এখানে কালিগঙ্গার বাঁকে দিগন্তে মিলেছে কাশের বন। বছিলা সেতু পার হয়ে আটিবাজার ছেড়ে আরও কিছু দূর গেলে হযরতপুর। সেখান থেকে খেয়া নৌকা পার হলেই এ কাশবন। হযরতপুর যাওয়ার সহজ বাহন বেবিট্যাক্সি।
এছাড়া কেরাণীগঞ্জের কাশফুলের আরেক জায়গা হাসনাবাদ। এখানকার ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক ঘেঁষে কাশফুলেরা ডানা মেলেছে বহুদূর। পোস্তোগোলা কিংবা বাবু বাজারের বুড়িগঙ্গা সেতু পার হয়ে সহজেই যাওয়া যায়।
রাজধানীর সবচেয়ে কাছের কাশবন রয়েছে আফতাবনগরে। রামপুরা সেতুর উত্তর-পূর্ব পাশে জহুরুল ইসলাম সিটির প্রবেশপথ দিয়ে যেতে হবে। কিছুদূর চলতেই লোহার সেতু। এর মুখে আনসার সদস্যদের চেকপোস্ট। সেখান থেকে আধা কিলোমিটার গেলেই কাশবন আর কাশবন।
ঢাকার কাছে আরেক কাশবনের রাজ্য আশুলিয়া। মিরপুর ভেড়িবাঁধ ধরে আশুলিয়া যেতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পশ্চিম পাশের বিস্তীর্ণ জায়গাটি এখন কাশফুলে সাদা হয়ে আছে।
উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্টের ফটক ধরে এই জায়গায় যাওয়া যায়। প্রধান সড়কের হাতের বাঁ দিকে সবই এখন কাশবন। গাড়ি নিয়ে যারা যাবেন এ জায়গাটি তাদের জন্য ভ্রমণে সুবিধাজনক হবে। কারণ রয়েছে সুন্দর পিচঢালা পথ। দুই পাশেই ফুটন্ত কাশবন।
ঢাকা থেকে একটু দূরে যারা কাশবনে বেড়াতে চান তাদের জন্য পদ্মা কিংবা যমুনা চর ভালো জায়গা।
পদ্মার চরে কাশবন দেখতে চাইলে যেতে হবে মাওয়া। সেখান থেকে ইঞ্জিন নৌকায় চড়ে যে কোনো চরে গেলেই পেয়ে যাবেন কাশবন। ঢাকা থেকে মাওয়া যাওয়ার জন্য ইলিশ পরিবহন ভালো। ছাড়ে গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া থেকে।
যমুনার চরে কাশবন দেখতে যেতে হবে মানিকগঞ্জের আরিচায়। সেখানকার পুরনো ফেরিঘাটে গিয়ে ইঞ্জিন নৌকায় চড়ে যেতে হবে চরে। আরিচার বুকে জেগে ওঠা চরগুলোও এখন কাশফুলে একাকার।
গাবতলী থেকে শুভযাত্রার লাক্সারি পরিবহনে যাওয়া যাবে আরিচা। ভাড়া ৮০-১২০ টাকা। পদ্মা কিংবা যমুনার চরে ভ্রমণের জন্য ১০ জনের উপযোগী একটি ইঞ্জিন নৌকার সারাদিনের ভাড়া পড়বে ১ হাজার থেকে ১৫শ’ টাকা।

মনে রাখবেন
কাশবনগুলো সাধারণত নীরব এবং জনবিচ্ছিন্ন এলাকা। তাই এসব জায়গায় দলবদ্ধভাবে যাওয়াই ভালো। যারা সাঁতার জানেন না তারা পদ্মা কিংবা আরিচার চরে কাশবন দেখতে গেলে লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে নেবেন।
চরে এ সময়ে কাঁদামাটি বেশি নরম থাকে। তাই যেসব জায়গায় বালুচর আছে সেখান থেকে চরে নামবেন। বনের ভেতরে সতকর্তার সঙ্গে চলুন। কাশফুলের পাতা বেশ ধারালো।

Comments

comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*