প্রচ্ছদ > কেনাকাটা > টেলিভিশন কেনার আগে
টেলিভিশন কেনার আগে

টেলিভিশন কেনার আগে

কিছুদিন পরেই শুরু হচ্ছে ফুটবলের বিশ্বকাপ ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ। অনেকেই হয়তো ঘরে বসে টেলিভিশনে খেলা দেখার জন্য ভালো একটি টেলিভিশন কেনার কথা পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু কোন টিভিটা ভালো? টিভি কেনার ক্ষেত্রে কিছু পরামর্শ মেনে চললে টিভি কেনার ক্ষেত্রে সুবিধা হতে পারে।
প্লাজমা, এলসিডি, এলইডি, এইচডিটিভি অথবা স্মার্ট টিভির নামে বাজারে এখন নানা ধরনের টেলিভিশনই সহজলভ্য। কিন্তু নতুন টেলিভিশন কেনার আগে কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করা উচিত বলেই মত দিয়েছেন প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা। সম্প্রতি টাইমস অব ইন্ডিয়ায় টেলিভিশন কেনার আগে প্রয়োজনীয় তথ্য সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। টেলিভিশন কেনার আগে এ পরামর্শগুলো কাজে আসতে পারে।

কোন আকারের টিভি কিনবেন?
টেলিভিশন কেনার ক্ষেত্রে প্রথম যে বিষয়টি মনে রাখতে হবে তা হচ্ছে, বাড়িতে কোথায় বসে টেলিভিশন দেখা হবে সেটি বিবেচনায় রাখা। টেলিভিশন ও দর্শকের বসার দূরত্ব অনুযায়ী টেলিভিশনের মাপ নির্বাচন করা উচিত। যদি টিভি দেখার দূরত্ব আট ফুট হয় তবে টেলিভিশনের মাপ হতে হবে কমপক্ষে ৩২ ইঞ্চি এবং সর্বোচ্চ ৬৫ ইঞ্চি। তবে বলা হয়, টিভি যত বড় হয় দেখতে তত সুবিধা। এ সূত্র অনুযায়ী বাজেটের মধ্যে এ মাপের যেকোনো মডেল কিনতে পারেন। তবে, টিভি কেনার ক্ষেত্রে সূত্রের চেয়ে সাধ আর সাধ্যের সমন্বয় বড় কথা।

এলসিডি টিভিএলসিডি, প্লাজমা নাকি এলইডি?
বাজারে থাকা এলসিডি, প্লাজমা ও এলইডি এ তিন প্রযুক্তির টেলিভিশনের মধ্যে এলসিডি দাম তুলনামূলকভাবে কম। সাশ্রয়ী বাজেট হলে উজ্জ্বল ও অত্যন্ত হালকা-পাতলা এ টেলিভিশনগুলো আপনার জন্য জুতসই হতে পারে। এলসিডি টেলিভিশনকে বলা হয় বিদ্যুত্ সাশ্রয়ী। তবে প্লাজমা ও এলইডি টেলিভিশনের তুলনায় এলসিডিতে ছবির মান খারাপ বা কম বাস্তব সম্পন্ন মনে হতে পারে। এদিকে, এলসিডির তুলনায় প্লাজমা টিভিতে স্বচ্ছ ও ঝকঝকে ছবি দেখা যায়। দ্রুতগতির খেলাধুলা উপভোগ করার জন্য প্লাজমা টিভির সবচেয়ে ভালো বলে ব্যবহারকারীরা মতামত দেন। তবে, প্লাজমা টেলিভিশনে বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয়। এলইডি টিভির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, এই টেলিভিশন সবচেয়ে কম বিদ্যুত্ খরচ করে। লাইট এমিটিং ডায়োড বা এলইডি টিভিতে কনট্রাস্ট রেশিও উন্নত, কিন্তু এলইডি টিভির দাম তুলনামূলকভাবে বেশি। তবে বর্তমানে এলইডি, এলসিডি ও প্লাজমা টিভি চেনার বিষয়টি কষ্টকর হতে পারে। এখন টিভি নির্মাতারা ‘এলইডি প্লাস’ ও ‘সুপার এলইডি’ নামেও টিভি বাজারজাত করছে। তবে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, দুই লাখ বা তার বেশি দামের ভালো ব্র্যান্ডের টিভি না হলে ফুল-অ্যারি এলইডি বা সত্যিকারের এলইডি স্ক্রিনযুক্ত টিভি পাওয়ার নিশ্চয়তা কম। কম দামি টিভিতে এলইডি, এলসিডি বা প্লাজমার পার্থক্য বের করা কঠিন। এর মধ্যে প্লাজমা টিভিতে উন্নত কালো স্তর পাওয়া সম্ভব কিন্তু কোনো কারণে এই টিভিতে সমস্যা দেখা দিলে তা মেরামত করা কঠিন হবে। তাই এলসিডি বা এলইডির দিকে যাওয়ায় ভালো।

এইচডিটিভিএইচডি নাকি ফুল এইচডি?
৪৬ ইঞ্চির কম মাপের টিভিগুলোতে হাই ডেফিনেশন (এইচডি) টিভি ও ফুল-এইচডি টিভির পার্থক্য করা কঠিন। কিন্তু আট ফুটের কম দূরত্ব থেকে ব্লু-রে মুভি দেখলে এই পার্থক্য ধরা পড়ে। আট ফুটের কম দূরত্ব থেকে টিভি দেখলে ফুল এইচডির দিকে যেতে পারেন। তবে যদি বেশি দূর থেকে টিভি দেখেন তবে এইচডি টিভিই শ্রেয়।

স্মার্ট টিভি কেমন হবে?
বাজেট তুলনামূলকভাবে বেশি হলে স্মার্ট টেলিভিশন কেনার কথা ভাবতে পারেন। স্মার্ট টেলিভিশনে ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের সুযোগ থাকে। স্কাইপ, টুইটার, ফেসবুক, ইউটিউব, প্রভৃতি সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলো ব্যবহার করা যায়। স্মার্ট টিভিতে ওয়াই-ফাই বা ইন্টারনেট ব্রাউজ করার সুবিধা থাকে। স্মার্ট টিভি কেনার আগে ‘ওয়াই-ফাই বিল্ট ইন’ নাকি ‘ওয়াই-ফাই রেডি’ সে সুবিধা দেখে কিনতে হবে। শুধু ওয়াই-ফাই রেডি স্মার্ট টেলিভিশন হলে পরবর্তীতে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে আলাদা ডংগল কেনার প্রয়োজন হবে। স্মার্ট টিভি কেনার আগে আরও দেখে নিতে হবে এতে ইউএসবি পোর্ট সুবিধা আছে কিনা। ইউএসবি পোর্ট থাকলেই যে, এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভ বা পেন সমর্থন করবে এমন কথা নয়। স্মার্ট টিভি কেনার আগে তা পোর্টেবল হার্ডডিস্ক বা কোন ধরনের ডিজিটাল ফরম্যাট সমর্থন করে তা অবশ্যই যাচাই করে নিতে হবে। স্মার্ট টিভিতে তিনটি এইচডিএমআই পোর্ট আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখুন। কমপক্ষে দুটি এইচডিএমআই পোর্ট না থাকলে সে টিভি কেনা উচিত হবে না। যদি আপনার বাজেটের মধ্যে হয় তবে অবশ্যই বিল্ট ইন ওয়াই-ফাই সুবিধার স্মার্ট টিভি কিনবেন।

মুভি চলবে তো?
আপনি যে টিভি কিনতে যাচ্ছেন তাতে ইউএসবি পোর্ট থাকা মানেই সব ধরনের মুভি তাতে চলবে এমন কথা নয়। ভিন্ন ভিন্ন মডেল ভিন্ন ভিন্ন ফরম্যাট সমর্থন করতে পারে। আপনার পছন্দের টিভিতে এভিআই, কেএমভি, এমপিফোর বা অন্যান্য ফাইল সমর্থন করছে কিনা যাচাই করে নিন। বিক্রেতাকে আগে জিজ্ঞাসা করুন এবং সম্ভব হলে সঙ্গে একটি বিভিন্ন ফাইল ফরম্যাটের মুভি রাখা পেনড্রাইভ রাখুন যাতে টিভিতে চালিয়ে পরীক্ষা করে নিতে পারেন। আপনার টিভির সঙ্গে যদি পোর্টেবল হার্ডড্রাইভ ব্যবহারের পরিকল্পনা থাকে তবে টিভিতে তা সমর্থন করছে কিনা তা টিভি কেনার আগেই পরীক্ষা করে নিন। আপনার নিজের সুবিধার কথা ভেবে এবং দীর্ঘমেয়াদি একটি যন্ত্র কেনার আগে একটু যাচাই-বাছাই করে কেনা ভালো।

ভিউয়িং অ্যাঙ্গেল ঠিক আছে?
টেলিভিশন দেখার সময় একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ভিউয়িং অ্যাঙ্গেল বা বিভিন্ন কোণ থেকে টিভি দেখার সুবিধা-অসুবিধার বিষয়টি। অনেক টেলিভিশন ব্যবহারকারীর মতে, অনেক সময় পাশ থেকে টেলিভিশন দেখলে তা ঘোলা দেখায় বা ছবি ও রং কিছুটা বদলে যায়। এটা হয় ভিউয়িং অ্যাঙ্গেলের কারণেই। কেননা ভিউয়িং অ্যাঙ্গেল কম হলে পাশ থেকে দেখার কারণে ছবির রং বদলে যাবে। আর ভিউয়িং অ্যাঙ্গেল বেশি হলে আপনি যতই পাশে থেকে দেখুন না কেন, ছবির রঙের কোনো পরিবর্তন হবে না। তাই টেলিভিশন সেট কেনার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার আগে এর ভিউয়িং অ্যাঙ্গেল পরীক্ষা করে নিন। কিছু টেলিভিশনে কেবল সামনাসামনি বসলেই তা ভালোভাবে দেখা যায়। পাশ থেকে দেখলে রঙের পরিবর্তন ঘটে। এ পরিবর্তন মূলত টুইস্টেড নেমাটিক, ভার্টিক্যাল অ্যালাইমেন্ট ও ইন-প্লেন সুইচিং (আইপিএস) প্যানেলের ওপর নির্ভর করে। আইপিএস স্ক্রিন সবচেয়ে ভালো ভিউয়িং অ্যাঙ্গেল দেখাতে পারে আর টুইস্টেড নেমাটিক স্ক্রিন সবচেয়ে খারাপ ভিউয়িং অ্যাঙ্গেল দেখায়। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, শোয়ার ঘরের জন্য টেলিভিশন কিনতে হলে আইপিএস স্ক্রিনের টিভি কেনা ভালো।

টিভিতে কেমন শব্দ শোনা যায়?
টেলিভিশন কেনার আগে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা উচিত আর তা হলে টিভির শব্দের মান। হালকা-পাতলা টেলিভিশনগুলোর ক্ষেত্রে বড় দুর্বলতা হচ্ছে এর শব্দের মান তুলনামূলকভাবে উন্নত হয় না। তাই টিভি কেনার আগে এ বিষয়টিও মাথায় রাখা উচিত।

প্যাসিভ নাকি অ্যাকটিভ থ্রিডি?
টিভি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এলজি প্যাসিভ থ্রিডি টিভি বিক্রি করে। যারা ক্যাজুয়াল টিভি দেখেন তাঁদের জন্য বাস্তব উপযোগী প্যাসিভ থ্রিডি টিভি। এই টিভির জন্য আলাদাভাবে থ্রিডি চশমার প্রয়োজন পড়ে। যেসব কনটেন্ট প্যাসিভ থ্রিডি হিসেবে তৈরি হয় তা এই টিভিতে বেশি উপভোগ্য হয়। স্যামসাং, সনিসহ বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ড অ্যাকটিভ থ্রিডি টিভি তৈরি করে। এই টিভি সেটগুলো যাঁরা বেশি থ্রিডি ব্লু-রে ডিস্ক থেকে মুভি দেখেন তাঁদের জন্য উপযোগী। এই টিভির জন্য চশমা ও টিভিতে থ্রিডি প্রযুক্তি ও টিভি দেখার অভ্যাস ঠিকঠাক করিয়ে নিতে হবে।

ওয়ারেন্টিসহ নাকি ওয়ারেন্টি ছাড়া?
টিভি কেনার আগে ওয়ারেন্টির বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে। কোন দোকান বা শোরুম থেকে টিভি কিনছেন এবং টিভি নির্মাতার বেঁধে দেওয়া মূল দামের সঙ্গে এবং ওয়ারেন্টির সঙ্গে তারতম্য থাকছে কিনা যাচাই করে নিন।

Comments

comments

Comments are closed.