প্রচ্ছদ > ক্যারিয়ার > পরীক্ষার প্রস্তুতি > বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি
বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি

বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি

প্রিলিমিনারির পর বিসিএসে এবার লিখিত পরীক্ষা। ভালো প্রস্তুতিই ভালো করার শর্ত। প্রস্তুতির খুঁটিনাটি ও নিজের অভিজ্ঞতার জানাচ্ছেন ৩১তম বিসিএস পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধাতালিকায় প্রথম ও কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ফারহানা জাহান উপমা

শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা, মেধাক্রমে নিজের অবস্থান ও পছন্দের ক্যাডার পাওয়ার অনেকটাই নির্ভর করে লিখিত পরীক্ষার ওপর। বিষয়টি জেনেছিলাম আগেই। তখন থেকেই সুনির্দষ্টি পরিকল্পনা করে প্রস্তুতি নিয়েছি। বিজ্ঞানের ছাত্রী হওয়ায় গণিত ও বিজ্ঞানে কোনো সমস্যা ছিল না। তবে বাংলা, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে ছিল দুর্বলতা। তাই এসব বিষয়ে মনোযোগ দিয়েছিলাম বেশি। পরীক্ষার্থীদের প্রতি আমার পরামর্শ, প্রস্তুতির শুরুতেই নিজের দক্ষতা ও দুর্বলতা চিহ্নিত করুন। জানার পরিধি কম এমন বিষয়ে মনোযোগ দিন বেশি। প্রায় সব বিষয়েই প্রিলিমিনারির প্রস্তুতিকে কাজে লাগানো যায়।

সাধারণ বাংলা সাধারণ নয়
বাংলা প্রথম পত্রে ব্যাকরণ, সাহিত্য, ভাবসম্প্রসারণ, সারাংশ, সারমর্ম থেকে প্রশ্ন আসে। ব্যাকরণ অংশে প্রশ্ন করা হয় শুদ্ধিকরণ, শূন্যস্থান পূরণ, বাগধারা এবং পারিভাষিক শব্দ থেকে। আগে সারাংশ অথবা সারমর্ম যেকো

৩১তম বিসিএস পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধাতালিকায় প্রথম

৩১তম বিসিএস পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধাতালিকায় প্রথম

নো একটি উত্তর করতে হতো। ২৮তম বিসিএস থেকে দুটিরই উত্তর করতে হয়। জানতে হবে বাংলা সাহিত্যের এটুজেড। বাংলা দ্বিতীয় পত্রে দুটি রচনা এবং একটি চিঠি অথবা দরখাস্ত লিখতে হয়। সাধারণত সমসাময়িক বিষয়, বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে রচনা আসে। জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয় নিয়মিত পড়লে রচনায় ভালো করা যায়। পড়তে হবে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ব্যাকরণ বই। সহায়ক হবে ‌’বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত’, ‘লাল নীল দীপাবলি’।

ছোট বাক্যে ইংরেজি উত্তর
ইংরেজি প্রথম পত্রে দুটি অনুবাদ (বাংলা থেকে ইংরেজি এবং ইংরেজি থেকে বাংলা), ভাবসম্প্রসারণ, সারাংশ এবং ব্যাকরণ-এ বিষয়গুলো থেকে প্রশ্ন থাকে। অনুবাদের ক্ষেত্রে আক্ষরিক অর্থে না করে ভাবানুবাদ করাই শ্রেয়। সারাংশ অনধিক তিন বাক্যে শেষ করতে হবে। সারাংশে প্রশ্নে উল্লিখিত শব্দ ব্যবহার না করাই ভালো। Preposition, Transformation of sentences, Voice, Narration, Phrase and Idioms থেকে প্রশ্ন হয়ে থাকে ব্যাকরণ অংশে।
ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রে দুটি রচনা, একটি প্রতিবেদন ও একটি চিঠি অথবা দরখাস্ত লিখতে হয়। সরল, সহজবোধ্য ও ছোট ছোট বাক্যে উত্তর লেখাই শ্রেয়। অভ্যাস করতে হবে ইংরেজি পত্রিকা, ম্যাগাজিন পড়ার। মাধ্যমিক পর্যায়ের বোর্ড নির্ধারিত ইংরেজি ব্যাকরণ বই কাজে দেবে। এ ছাড়া বাজারে সহায়ক অনেক বই পাওয়া যায়, যা কাজে আসতে পারে।

গণিতে বারবার চর্চা
পাটিগণিত, বীজগণিত ও জ্যামিতি থেকে প্রশ্ন করা হয়। পাটিগণিতে সরল, অনুপাত-সমানুপাত, শতকরা, লাভ-ক্ষতি, সুদকষা, ল.সা.গু-গ.সা.গু, পরিমিতি, ঐকিক নিয়ম থেকে প্রশ্ন করা হয়। বীজগণিতে প্রশ্ন হয় মান নির্ণয়, উত্পাদক, সূচক, লগারিদম ও সমাধান থেকে। পাটিগণিতের জন্য পুরনো সিলেবাসের মাধ্যমিক বই থেকে চর্চা করতে হবে। অষ্টম শ্রেণীর বইও কাজে দেবে। পরীক্ষায় সরল অঙ্কের উত্তর না করাই শ্রেয়। গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক অভীক্ষায় ৫০টি এমসিকিউ টাইপের প্রশ্নের উত্তর করতে হয়।

জানতে হবে বাংলাদেশ বিষয়াবলি
প্রথম পত্রে বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি, ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, সাহিত্য ও সাংস্কৃতি, প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ, সরকারের বিভিন্ন নীতি ও কৌশল বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। দ্বিতীয় পত্রে সংবিধান, পররাষ্ট্রনীতি, স্থানীয় সরকার, এনজিও, নারীর ক্ষমতায়ন, গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রব্যবস্থা, সুশাসন, আইএমএফ, এডিবি, বিশ্বব্যাংক, মুক্তবাজার অর্থনীতি, বিশ্বায়ন বিষয়ে প্রশ্ন হয়ে থাকে। প্রশ্ন হতে পারে সমসাময়িক জাতীয় ঘটনাবলি নিয়ে। ভালো করতে হলে পড়তে হবে মাধ্যমিক পর্যায়ের সামাজিকবিজ্ঞান বই। বিভিন্ন গবেষণামূলক গ্রন্থও প্রস্তুতিতে কাজে আসতে পারে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনেরও খবর জানা চাই
বিশ্বের সব আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থা সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। প্রশ্ন হতে পারে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক, সার্ক, আসিয়ান, ওআইসি, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, আফ্রিকান ইউনিয়ন, জাতিসংঘ, ওপেক, জলবায়ু পরিবর্তন, গ্রিন হাউস ইফেক্ট, খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে। বিশ্বব্যাপী বহুল আলোচিত-সমালোচিত সাম্প্রতিক ঘটনাবলি থেকে প্রশ্ন থাকবেই। এসব প্রশ্নের উত্তরের জন্য পাঠ্য বই যথেষ্ট নয়। নিয়মিত পত্রপত্রিকা পড়তে হবে, শুনতে হবে রেডিও-টিভির সংবাদ। বাজারে প্রচলিত বই প্রস্তুতির জন্য সহায়ক হতে পারে।

দৈনন্দিন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
বিগত বছরে দেখেছি, আলোর প্রতিফলন, প্রতিসরণ, অভিকর্ষ, মহাকর্ষ, চুম্বক, ডায়নামো, ট্রান্সফরমার, জারন-বিজারণ, বায়ুর উপাদান, বায়ুমণ্ডল এবং দৈনন্দিন বিজ্ঞানবিষয়ক প্রশ্ন থাকে। প্রশ্ন করা হয় সাধারণ কিছু রোগব্যাধি, যেমন-জন্ডিস, ক্যান্সার, এইডস, হার্ট-অ্যাটাক, স্ট্রোক-এসব বিষয়ের ওপর। তথ্যপ্রযুক্তি অংশে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কিত মৌলিক প্রশ্ন আসে। মাধ্যমিক পর্যায়ের সাধারণ বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বই পড়লেই এ অংশে ভালো করা সম্ভব।

Comments

comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*