প্রচ্ছদ > অর্থ-বাণিজ্য > লাল ও হলুদ জোনে সাধারণ ছুটি (তিন জোনের তালিকাসহ)
লাল ও হলুদ জোনে সাধারণ ছুটি (তিন জোনের তালিকাসহ)

লাল ও হলুদ জোনে সাধারণ ছুটি (তিন জোনের তালিকাসহ)

কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার বিবেচনায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে যে তিনটি জোনে ভাগ করা হচ্ছে, তার মধ্যে লাল ও হলুদ জোনে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এছাড়া গত ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে যেভাবে অফিস চলছে, সবুজ জোনে অবস্থিত অফিসগুলো ১৬ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সেভাবেই চলবে জানিয়ে আদেশ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

সেখানে বলা হয়, “লাল ও হলুদ অঞ্চলে অবস্থিত সামরিক বা অ-সামরিক সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বয়ত্তশাসিত বা বেসরকারি দপ্তরগুলো এবং লাল ও হলুদ অঞ্চলে বসবাসকারী এসব দপ্তরের কর্মকর্তারা সাধারণ ছুটির আওতায় থাকবেন। সবুজ অঞ্চলে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এব বেসরকারি অফিস নিজ ব্যবস্থাপনায় সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে।”

সীমিত পরিসরে অফিস খোলা থাকার সময় অর্থাৎ, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সব ধরনের গণপরিবহনও চলাচল করতে পারবে। সীমিত পরিসরে অফিস চালু রাখার ওই সিদ্ধান্তের মেয়াদ নতুন করে ১৬ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর পাশাপাশি ওই সময় পর্যন্ত গণপরিবহন চালানোরও অনুমতি দেওয়া হল।

বিধি-নিষেধ

সিমিত আকারে অফিস, যানবাহন খোলা থাকলেও যেসব ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ রয়েছে, তা ৩০ জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। সাপ্তাহিক ছুটি এ নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (প্রয়োজনীয় ক্রয়-বিক্রয়, কর্মস্থলে যাতায়াত, ওষুধ কেনা, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না; বাইরে চলাচলের সময় অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এ নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিধিনিষেধের সময়ে জনসাধারণ এবং সব কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই স্থাস্থ্য সেবা বিভাগের জারি করা নির্দেশাবলি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।

হাটবাজার, দোকান-পাটে কেনাবেচার পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালন করতে হবে। শপিংমলের প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। শপিংমলে আসা যানবাহনগুলোকে অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। বাজার, দোকানপাট এবং শপিংমলগুলো বিকাল ৪টার মধ্যে অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।

আইনশৃঙ্খলা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কাজে নিয়োজিত সংস্থা এবং জরুরি পরিষেবা যেমন- ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দর (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবা এবং অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতা-বহির্ভুত থাকবে।

সড়ক ও নৌপথে সকল প্রকার পণ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত ট্রাক, লরি, কার্গো ভেসেল চলাচল অব্যাহত থাকবে।

কৃষিপণ্য, সার, কীটনাশক, খাদ্য, শিল্প পণ্য, রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের মালামাল, কাঁচা বাজার, খাবার, ঔষধের দোকান, হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এসবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের ক্ষেত্রে এ ছুটি প্রযোজ্য হবে না।

চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মী এবং ঔষধসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম বহনকারী যানবাহন ও কর্মী, গণমাধ্যম (ইলেকট্রনিক ও প্রিন্টি মিডিয়া) এবং কেবল টিভি নেটওয়ার্কে নিয়োজিত কর্মীরা এ নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবেন।

ঔষধশিল্প, উৎপাদন ও রপ্তানিমুখী শিল্পসহ সকল কলকারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে চালু রাখতে পারবে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ প্রণীত ‘বিভিন্ন শিল্প কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার নির্দেশনা প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে।

নিষেধাজ্ঞাকালে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যাবে না। তবে অনলাইন কোর্স/ডিস্টেন্স লার্নিং অব্যাহত থাকবে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রশাসনকি কার্যাবলি চালাতে পারবে।

অঞ্চলভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।

অনুমোদিত অঞ্চলে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান, রেল ও বিমান চলাচল করতে পারবে; তবে মাস্ক পরা এবং স্বাস্থ্য বিভাগের জারি করা নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।

সকল প্রকার সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত ও অনুষ্ঠান আয়োজন বন্ধ থাকবে। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুশাসন ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদগুলোতে জামাতে নামাজ আদায় এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসানালয়ে প্রার্থনা করা যাবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রণীত ‘বাংলাদেশ রিস্ক জোন-বেইজড কোভিড-১৯ কনটেইনমেন্ট ইপ্লিমেন্টেশন স্ট্র্যাটিজি/গাইড অনুসরণ করে কর্তৃপক্ষ লাল অঞ্চল (রেড জোন), হলুদ অঞ্চল (ইয়োলো জেন) ও সবুজ অঞ্চল (গ্রিন জোন) হিসেবে ভাগ করে জেলা/উপজেলা/এলাকা/বাড়ি/মহল্লাভিত্তিক জন চলাচল/জীবনযাত্রা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে প্রত্যেকটি জোনের জন্য কোভিড নমুনা পরীক্ষা, কোভিড-ননকোভিড স্বাস্থ্যসেবা প্রোটোকল, কোয়ারেন্টিনন/আইসোলেশন, অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, জন চলাচল, যান চলাচল, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, খাবার ও ওষুধ সরবরাহ, দরিদ্র লোকদের জন্য মানবিক সহায়তা, মসজিদ-মন্দির অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ধর্মচর্চা, জনসচেতনতা তৈরি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ব্যাংকিং সুবিধাসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান/শিল্প প্রতিষ্ঠান/ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার বিষয়ে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) তৈরি করতে হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

সিটি করপোরেশন এলাকায় অঞ্চলভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার সার্বিক দায়িত্ব থাকবে সিটি করপোরেশনের। সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে জেলা প্রশাসন সার্বিক সমন্বয় করবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা/উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো সমন্বিতভাবে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। এ কার্যক্রমে সংসদ সদস্যরাসহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ স্বেচ্ছাসেবীসহ অন্যান্যদেরকে সম্পৃক্ত করতে হবে।

লাল ও হলুদ অঞ্চলে সামরিক ও অসামরিক সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি দপ্তরগুলো এবং লাল ও হলুদ অঞ্চলে বসবাসকারী কর্মকর্তারা সাধারণ ছুটির আওতায় থাকবেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

সবুজ অঞ্চলে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিসগুলো নিজ ব্যবস্থাপনায় সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে। এ নিষেধাজ্ঞাকালে কেউ কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না। ঝুঁকিপূর্ণ, অসুস্থ কর্মচারী এবং অন্ত্বঃসত্তা নারীরা কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকবেন। এক্ষেত্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে জারি করা ১২ দফা নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় ক্ষেত্র ছাড়া সব সভা ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে আয়োজন করতে হবে।

রেড জোনে ঢাকার যেসব এলাকা

ঢাকা দক্ষিণের যেসব এলাকা : যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, মুগদা, গেন্ডারিয়া, ধানমন্ডি, জিগাতলা, লালবাগ, আজিমপুর, বাসাবো, শান্তিনগর, পল্টন, কলাবাগান, রমনা, সূত্রাপুর, মালিবাগ, কোতোয়ালি, টিকাটুলি, মিটফোর্ড, শাহজাহানপুর, মতিঝিল, ওয়ারী, খিলগাঁও, পরীবাগ, কদমতলী, সিদ্ধেশ্বরী, লক্ষ্মীবাজার, এলিফ্যান্ট রোড, সেগুনবাগিচা।

ঢাকা উত্তরের যেসব এলাকা: বসুন্ধরা, গুলশান, বাড্ডা, ঢাকা সেনানিবাস, মহাখালী, তেজগাঁও, রামপুরা, আফতাবনগর, মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, মগবাজার, এয়ারপোর্ট, বনশ্রী, রায়েরবাজার, রাজাবাজার, উত্তরা, মিরপুর।

চট্টগ্রামের যেসব এলাকা: চট্টগ্রাম বন্দর এলাকার ৩৭ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড (আংশিক), পতেঙ্গার ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড, পাহাড়তলির ১০ নম্বর ওয়ার্ড, কোতোয়ালীর ১৬, ২০, ২১ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ড, খুলশীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ড, হালিশহর এলাকার ২৬ নম্বর ওয়ার্ড।

অন্যান্য : নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ সদর এবং পুরো সিটি করপোরেশন এলাকাকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গাজীপুরের সব উপজেলা ‘রেড জোন’র আওতায় পড়েছে। নরসিংদীর সদর মডেল থানা, মাধবদী ও পলাশ এলাকা পড়েছে ‘রেড জোন’র মধ্যে।

ইয়েলো জোনে ঢাকার যেসব এলাকা

ইয়েলো জোন (আংশিক লকডাউন) বলে চিহ্নিত রাজধানীর ৩৮টি এলাকা হলো- আদাবর, থানা, উত্তরা পূর্ব, উত্তরা পশ্চিম, ওয়ারী, কদমতলী, কলাবাগান, কাফরুল, কামরাঙ্গীরচর, কোতয়ালী, খিলক্ষেত, গুলশান, গেন্ডারিয়া, চকবাজার, ডেমরা, তেজগাঁও, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, দক্ষিণখান, দারুসসালাম, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, পল্টন মডেল, পল্লবী, বংশাল, বাড্ডা, বিমানবন্দর, ভাটারা, মিরপুর মডেল, মুগদা, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী, রমনা মডেল, লালবাগ, শাহআলী, শাহজাহানপুর, শেরেবাংলা নগর, সবুজবাগ, সুত্রাপুর ও হাজারীবাগ থানা এলাকা।

গ্রিন জোনে ঢাকার যেসব এলাকা

ঢাকায় গ্রিন জোন (লকডাউন নয়) বলে চিহ্নিত এলাকা হলো- উত্তরখান থানা, ক্যান্টনমেন্ট থানা, তুরাগ, বনানী, ভাষানটেক, মতিঝিল, রূপনগর, শাহবাগ ও শ্যামপুর থানা এলাকা।

# তথ্য ও পরিস্থিতি পরিবর্তনশীল, যেকোনো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে। কোনো পরিবর্তন আসলে ও চূড়ান্ত হলে ফাইনাল জোন বিন্যাস সাইটে প্রকাশ করা হবে।

.

Comments

comments

Comments are closed.